নতুন বছরের প্রথম দিনে কুমিল্লায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও উৎসব হয়নি, বই পায়নি সব শিক্ষার্থীরা। তবুও উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না শিক্ষার্থীদের মাঝে। িনতুন বছরের প্রথম দিনে স্কুলে স্কুলে ভিড় জমিয়েছে শিক্ষার্থীরা। হাতে পাওয়ার পর কেউ নতুন বইয়ের মলাট খুলে দেখছে, গন্ধ শুঁকছে আবার কেউ বুকে বই নিয়ে ছুটছে এক বন্ধুর কাছ থেকে আরেক বন্ধুর কাছে। এ যেন নতুন বছরের উপহার। অন্যান্য বছরের মতো বই বিতরণকে কেন্দ্র করে উৎসব না থাকলেও উচ্ছ্বাসে ভেসেছে শিক্ষার্থীরা।
কুমিল্লার বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তরা বলেছেন , স্বাস্থ্যবিধি যেন বিঘ্নিত না হয় সেকারণে ১২ দিনের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করতে বলা হয়েছে মন্ত্রনালয় থেকে। প্রাথমিক অধিকাংশ বই পৌঁছে গেছে কুমিল্লায় তবে মাধ্যমিকের কিছু বইয়ের সংকট থাকলেও চলতি মাসেই তা পৌঁছবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কুমিল্লা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইউনুছ ফারুকী বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রত্যেক শ্রেণিকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বই বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো।’ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১ থেকে ৩ জানুয়ারি, সপ্তম শ্রেণিতে ৪ থেকে ৬ জানুয়ারি, অষ্টম শ্রেণিতে ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি এবং নবম শ্রেণিতে ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। জানা যায়, করোনার প্রভাবে সরকারি নির্দেশনার কারণে এবারও বই উৎসব হচ্ছে না। সাধারণভাবেই বিতরণ করা হচ্ছে বই। কিন্তু বই পেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে বই নিচ্ছে। এরপর মাঠের এক কোণে ভিড় জমাচ্ছে। অনেকে মেতে উঠেছে বই নিয়ে খেলায়।
কুমিল্লা জিলা স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে বিতরণ করা হচ্ছে বই। অভিভাবকরা স্কুল ক্যাম্পাসের বাইরে আর ভেতরে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে খোশ গল্পে মেতেছে। কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহির শাবাব বলেন, ‘নতুন স্কুল। নতুন বই। নতুন বন্ধু। অনেক আনন্দ হচ্ছে।’ অভিভাবক শামসুন্নার বলেন, ‘আমার মেয়েকে নিয়ে এসেছি। সে বন্ধুদের সঙ্গে আছে। অনেকদিন পর এসেছে, তাই আনন্দ করছে। নতুন বই পেয়ে সে খুব খুশি। যদিও সরকার উৎসব করেনি কিন্তু তাদের মনে উচ্ছ্বাস আছে।’
এ বছর কুমিল্লায় প্রাথমিকের দুই হাজার ১০৬ বিদ্যালয়ে ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৮টি বই বিতরণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই বিতরণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান। কুমিল্লা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইউনুছ ফারুকী বলেন, ‘২০২২ সালে জেলার ৫৪৩টি স্কুলে ৯৬ লাখ ৯০ হাজার ৬১৩টি বই বিতরণ করা হবে। ৩৭৯টি মাদ্রাসা ও ৪৬টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হবে এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৮টি বই। অর্থাৎ কুমিলা জেলায় মোট ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯১টি বই বিতরণ করা হবে।