1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
নওগাঁয় হাসপাতালে আসা রোগীরা রিপ্রেজেন্টেটিভদের কারনে বিব্রত
বাংলাদেশ । রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নওগাঁয় হাসপাতালে আসা রোগীরা রিপ্রেজেন্টেটিভদের কারনে বিব্রত

রুহুল আমিন :
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১
  • ৫৫৪ বার পড়েছে
নওগাঁয় হাসপাতালে আসা রোগীরা রিপ্রেজেন্টেটিভদের কারনে বিব্রত

হাসপাতালের চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হচ্ছেন আব্দুস ছাত্তার নামের একজন ৫০বছর বয়সী রোগী।বের হওয়া মাত্রই হাসপাতালের টিকিটি কাউন্টারের সামনে ৫/৬ জন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ তাকে ঘিরে ধরলেন।তার পর হাতের চিকিৎসা নির্দেশিকা বইটি নিয়ে নিলেন।দেখলেন চিকিৎসক কী কী ওষুধ লিখেছেন।অন্যদিকে একজন মোবাইল ফোনে বইটির ছবি তুলছেন।২/৩মিনিট পর সেই রোগিকে চিকিৎসা নির্দেশিকা বইটি ফেরত দেয়া হলো।আর প্রতিদিন এমন দৃশ্য নওগাঁর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে।

রিপ্রেজেন্টেটিভদের এমন হেনস্তায় বিব্রত সেবা নিতে আসা রোগী ও অভিভাবকরা।অন্যদিকে হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ বলছে,এ সমস্যার সুরাহা করা হবে,তবে একটু সময় লাগবে।নওগাঁ জেলার প্রায় ৩০লক্ষ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসার স্থল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল নওগাঁ।প্রতিদিন এই হাসপাতালে শত-শত মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসে।কিন্তু সেবা নিতে এসে বিরম্বনায় পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের রিপ্রেজেন্টেটিভদের কারনে।চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হওয়ার পর এমন কি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কাছেও চলে যাচ্ছেন চিকিৎসা নির্দেশিকা বই দেখতে।

এতে করে একদিকে যেমন বিব্রত রোগীরা অন্যদিকে বেড়েই চলছে রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ব।হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত কারনে ৮মাস বয়সী শিশুকে ভর্তি করিয়েছেন দেবাশিষ সাহা।তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন,৩দিন থেকে আমার শিশুকে এখানে ভর্তি করে চিকিৎসা করাচ্ছি।আমার ৮মাস বয়সী ছেলে সন্তান এর ঠান্ডা লেগেছে।আজ (বৃহস্পতিবার ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই রিপ্রেজেন্টেটিভ এসে চিকিৎসা নির্দেশিকা বই চাইলো।এর পর আমি বললাম সেটা কি করবেন।উনারা বললো যে একটু দেখবো। তার পর আমি দেওয়ার আগেই তারা টেবিলে রাখা চিকিৎসা নির্দেশিকা বইটি নিয়ে ছবি তুললো।

কেবিনে প্রবেশ করে এমন করার কোন মানে হয়না।এটা কতটুকু উচিত হয়েছে তাদের।যেন দেখার কেউ নেই এগুলো।হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নির্দেশিকা বই নিয়ে বের হচ্ছেন আব্দুস ছাত্তার নামের একজন রোগী।এর পর তিনি হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার অতিক্রম করার সাথে সাথেই ৫/৬ জন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ তাকে ঘিরে ধরলেন। তার হাতের চিকিৎসা নির্দেশিকা বইটি নিয়ে নিলেন।দেখলেন চিকিৎসক কী কী ওষুধ লিখেছেন।অন্যদিকে কয়েকজন মোবাইল ফোনে বইটির ছবি তুলছেন।২/৩মিনিট পর সেই রোগীকে চিকিৎসা নির্দেশিকা বইটি ফেরত দেয়া হলো।

এর পর হাসপাতাল গেটের বাহিরে গিয়ে আব্দুস ছাত্তারের সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন,আরে বাবা হামাক যে ভাবে চারদিক দিয়া ঘিরা ধরলো প্রথমে মনে করিছনু পুলিশের লোক।ভয় পাইয়া কছি কি হছে বাবা হামাক এভাবে ঘিরা ধরলিন ক্যা।তখন কলো চিকিৎসা নির্দেশিকা বইটি দেন দেখবো।দেয়ার আগেই হাতোত থ্যাকা লিয়া ছবি তুললো।তার পর ২/৩মিনিট ধরা দেখার পর ফেরত দিলো।হামি একজন বয়ষ্ক রোগী একাই আচ্ছি।এমন কইরা হেনেস্থা করার কোন মানে হয় কওতো বাবা।

আফরিন জান্নাত নামের একজন সেবা প্রত্যাশী জানান,আমি ডাক্তার দেখে বের হতেই আমার হাত থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলছে। বিব্রতকর পরিস্থিতি।কেমন আচরণ এগুলো।হাসপাতালে সেসব রোগীরা আসে তাদের মধ্যে অনেক গুরুত্বর রোগি থাকে।টেনশন থাকে।এমন পরিস্থিতিতে তারা কেন এমনভাবে বিব্রত করে।হাসপাতাল কৃর্তপক্ষের উচিত তাদেরবিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার।প্রতিদিনই হাসপাতালে তারা ভিড় জমায়।কেন যে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়না বুঝিনা।হয়তো ডাক্তারদের সাথে রিপ্রেজেন্টেটিভদের যোগাযোগ আছে সুবিধা নেয়ার।

রিপ্রেজেন্টেটিদের এমন কর্মকান্ডের ছবি তুলতে গেলে উল্টো এই প্রতিবেদক এর ছবি তুলতে এগিয়ে আসেন তাদের কয়েকজন।ছবিও তুলেন।এর পর অনেকক্ষণ যাবৎ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের রিপ্রেজেন্টেটিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে নাম প্রকাশ করার শর্তে একজন রিপ্রেজেন্টেটিভ জানান,ভাইয়া আমার নাম প্লিজ প্রকাশ করবেন না প্লিজ।আসলে আমরা সেলস বিভাগে কাজ করি।নানা সময় চিকিৎসকদের নানা ধরনের সুবিধা ও উপহার দিয়ে থাকি।আমাদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশানে লিখলে বিশেষ উপহারের ব্যবস্থা করে থাকি চিকিৎসকদের জন্য।

আমরা হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকি চিকিৎসকরা আমাদের ওষুধ প্রেসক্রিপশানে লিখছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমারা রোগীদের দাঁড় করিয়ে চিকিৎসাপত্র যাচাই করি।এটাতো চিকিৎসকরাও জানেন।ঠিক বেঠিক হিসাব করলে আমার এ পেশায় কাজ করতে পারবো।সবাইকে মেনেজ করেই তো চলি আমরা।তাই আপনি আমাদের এগুলো তুলে না ধরলেই ভালো হবে ভাইয়া।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ জান্নাতুন নাঈম বলেন,প্রতিদিন প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ জন রোগী দেখি।এসময় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের রিপ্রেজেন্টেটিদের সাথে কথা বলার সময় কই।আমাদের সাথে রিপ্রেজেন্টেটিদের কোন যোগাযোগ নেই।রোগীর জন্য যে ওষুধ প্রয়োজন সেটাই প্রেসক্রিপশানে লিখা হয়।চিকিৎসকরা রোগীদের প্রেসক্রিপশানে কি লিখলো সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্যই তো রিপ্রেজেন্টেনটিভরা হাসপাতালের রোগীদের প্রেসক্রিপশান দেখে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,যদি আপনার তাই মনে হয় তাহলে পুশিল,ডিবি ও র‌্যাব দিয়ে তাদের ধরিয়ে দিন যেসব রিপ্রেজেন্টেনটিভরা হাসপাতালে অবস্থান করে।আমাকে কেন ফোন দিয়েছেন হাসপাতালের যারা উর্দ্ধতন কৃর্তপক্ষ আছে তাদের কে বলুন।

হাপাতালের সহকারী সার্জন ডাঃ মোঃ মাকসুদুল হক বলেন,আমরা আউটডোরে রোগী দেখার পর রোগীদের যে সব ওষুধ প্রয়োজন সে অনুযায়ী প্রেসক্রিপশান করে দেই।এর বাহিরে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের রিপ্রেজেন্টেটিদের চাহিদামত কোন ধরনের ওষুধ এর নাম লিখা হয়না।আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি সঠিক নয়।ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর নওগাঁর রিজিওন্যাল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান জানান,আমাদের যারা রিপ্রেজেন্টেটিভ আছে তাদের আমরা কখনোই রোগীর বা অবিভাবগের অনুমতি ছাড়া তাদের প্রেসক্রিপশান হাতে নিয়ে দেখতে নিষেধ করা আছে।

হাসপাতালে আসা সেবপ্রত্যাশীরা রিপ্রেজেন্টেটিভদের কারনে বিব্রত হয়,এমনকি অনেক সময় এক প্রকার জোড় করেও হাত থেকে প্রেসক্রিপশান নিয়ে অনেকক্ষন ধরে দেখে কোন কোম্পানির ওষুধ লিখা হয়েছে এবং ছবি তোলা হয়,এমনটা করা কি যুক্তিযুক্ত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আসলে এমনটা করা উচিত নয়।আমাদের মার্কেটিং এর ধরন অনুযায়ী রোগীদের অনুমতি নিয়ে প্রেসক্রিপশান দেখতে বলা হয়েছে।আর রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাজের অংশ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ওষুধের দোকান ভিজিট করা।যদি কেউ প্রেসক্রিপশান না দেখাতে চান তবে জোড় করা যাবেনা।

হাসপাতাল চত্বরে রোগীদের প্রেসক্রিপশান দেখার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড নওগাঁর সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার শাহিন কাদের বলেন,হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ আমাদের অনুমতি বা নিষেধ কোনটাই করেনি।যার কারনে আমাদের রিপ্রেজেন্টেটিভরা রোগীদের অনুমতি নিয়েই প্রেসক্রিপশান দেখে থাকেন।ডাক্তাররা কোন কোম্পানির ওষুধ লিখলো সেটা দেখার জন্য কি প্রেসক্রিপশান চেক করা হয়,এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,না বিষয়টি তেমন নয়,ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশানে কি ধরনের প্রোফাইল করে থাকে,কি ধরনের ওষুধ লিখে থাকে সেই ধারনা নেয়ার জন্য প্রেসক্রিপশান চেক করা হয়।

তাছাড়া একেক ওষুধ কোম্পানির মোটিভ একেক রকম হয়ে থাকে।আমরা ডাক্তারদের স্বস্ব কোম্পানির ওষুধ লিখার জন্য বলিনা।রিপ্রেজেন্টেটিভরা অনেক সময় ডাক্তারদের সাথে সাক্ষাত করতে যায় পরিচিত হয়।এর বাহিরে কিছু নয়।আর যদি হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ নিষেধ করে তবে আমাদের কোন রিপ্রেজেন্টেটিভরা হাসপাতালে যাবেনা।২৫০ শয্যা হাসপাতাল নওগাঁর তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ ইবনে ইমাম জানান,যেহেতু সেবা প্রত্যাশীরা এখন পর্যন্ত রিপ্রেজেন্টেটিভদের বিরুদ্ধে জড়ালোভাবে কোন অভিযোগ করেনি তাই আমরা রিপ্রেজেন্টেটিভদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

আর হাসপাতাল চত্বরে রিপ্রেজেন্টেটিভদের আসার ক্ষেত্রে অনুমতি বা নিষেধ কোনটাই করা হয়নি।যদি কোন চিকিৎিসক ওষুধ কোম্পানীর স্বার্থ রক্ষা করে ওষুধ লিখে তবে রোগীর স্বাস্থ্য বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হতে পারে।সকল কোম্পানীর ওষুধের মান এক রকম নয়।এ ক্ষেত্রে রোগীর জন্য যেমন ওষুধ দরকার চিকিৎসকের ঠিক তেমন ওষুধ ‍প্রেসক্রাইব করা উচিত।রিপ্রেজেন্টেটিভদের মন যোগাতে ওষুধ লেখার প্রবনতা অনেক চিকিৎসকের রয়েছে যা অস্বীকার করা যাবেনা।

যা খুবই দুঃখজনক।আমরা প্রতিদিই তাদের নিষেধ করে থাকি যে হাসপাতাল চত্বরে রিপ্রেজেন্টেটিভদের সতর্ক করে থাকি যাতে তাদের কারনে কোন রোগী বা অবিভাবকরা বিরক্ত না হয়। যেহেতু আপনি একটি অভিযোগ তুলেছেন চেষ্টা করছি যাতে তারা হাসপাতালের ভিতরে না আসে বা হাসপাতাল চত্বরে ভীড় না করে।তবে এ সমস্যার সুরহা করতে কিছুটা সময় লাগবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD