হাতের তৈরী খই গ্রামীণ একটি ঐতিহ্য। সাধারণত গ্রামাঞ্চলের বিশেষ কোন উৎসবকে কেন্দ্র করে তৈরী করা হয় এই মুখরোচক খাবার। অনেকের কাছে বিন্নি খই একটি পছন্দের খাবার। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের দাসেরগাঁও গ্রামের বিন্নি ধানের খই আজও এলাকার ঐতিহ্য বহন করছে। অগ্রহায়ণ থেকে বৈশাখ মাসে স্থানীয় মেলাকে কেন্দ্র করে বিন্নি ধানের খই ভাজার মৌসুম চলে। সাধারনত গ্রামীণ লোকজ মেলায় বিন্নি খইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা।
বংশ পরম্পরায় এ গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার বিন্নিধান চাষ ও খই তৈরির পেশায় জড়িত। দাসেরগাঁওয়ের কৃষকরা প্রতি বছর রোপা আমন মৌসুমে শুধুমাত্র বিন্নি ধানের চাষ করেন। অন্য জাতের তুলনায় বিন্নি ধানের ফলন বিঘা প্রতি ছয়-আট মণ হয়ে থাকে। ফলন কম হওয়াই এ ধানের দামও বেশি। বর্তমানে মান ভেদে প্রতি মণ ধানের দাম তিনহাজার পাঁচশত থেকে চার হাজার টাকা। বিন্নি খইয়ের চাহিদার তুলনায় উৎপাদিত ধানের জোগান কম থাকায় এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কৃষকে বিন্নিধান কিনতে হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। সরেজমিনে দাসেরগাঁও ঘুরে দেখা যায়, এলাকার নারীরা নিপুণ হাতে ভেজে চলছেন বিন্নি খই।
বসে নেই বাড়ীর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও শিশুরা। এ সময় কথা হয় প্রবীন মহিলা মল্লিকা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথমে পাঁচ-সাত দিন কাঁচা ধানকে রোদে শুকিয়ে চালের জন্য প্রস্তুত করা হয়। সেই চালকে কয়েক বার ভালো করে ধুয়ে সুতি কাপড়ের সাহায্যে শুকানোর পর মাটির চুলায় লোহার কড়াইয়ে বালু দিয়ে তা উত্তপ্ত করা হয়। বালু গরম হলে এর মধ্যে বিন্নি চাল দিয়ে বাঁশের কাঠির ঝাঁটা দিয়ে নাড়তে হয়। নাড়ার একপর্যায়ে তৈরি হয় বিন্নি ধানের খই।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান বলেন, বিন্নি খইয়ের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ এনজিও, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এই পেশার সঙ্গে জড়িতদের সহজশর্তে ঋণ পাইয়ে দেওয়া যায় কি না, এ ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করব।