ঠাকুরগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের দেয়া বরাদ্ধকৃত ঘর দখল করে নিজেদের লোকজনদের ঢুকিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।শনিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুবি আক্তারের বিরুদ্ধে এমনি অভিযোগ করেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ঘর পাওয়া ভুক্তভোগীরা।
সেই সাথে ক্ষমতার জোড় দেখিয়ে ঘরে তালা দেয়াসহ মারধরের অভিযোগও উঠেছেন ঐ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।যদিও সেই ইউপি সদস্য অভিযোগের কথাটি অস্বীকার করেছেন।এদিকে এ ঘটনার বিচার দাবী করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আশ্রয়নের ঘর পাওয়া ভুক্তভোগী আঞ্জু আক্তার,লাইলি বেগম ও জলেখা বেগম।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,গত কয়েকদিন ধরেই আলাদিহাট ধনিবস্তির আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্ধ পাওয়া ঘরের মালিক আঞ্জু আখতার, জলেখা বেগম ও লাইলি বেগম নামের তিনজন ভুক্তভোগীকে বরাদ্ধপ্রাপ্ত ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ভয় দেখিয়ে আসছে নারী ইউপি সদস্য রুবি আক্তার।বিষয়টি ভুক্তলোগী ওই তিনজন ব্যক্তি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অবগত করলেও তাতে তোয়াক্কা করেনি সেই ইউপি সদস্য।
শনিবার ইউপি সদস্য রুবি আক্তার ও তার ছেলে রনিসহ বেশ কয়েকজন জোরপূর্বক অন্যের বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরে নিজেদের মানুষদেরকে ঢুকিয়ে দেয়।এসময় গ্রাম্য পুলিশ বাঁধা দিতে গেলে এক পর্যায়ে নারী ইউপি সদস্য রুবি আক্তারের সাথে বাকবিতন্ডা হয়।তারপরও ঐ ইউপি সদস্য তোয়াক্কা না করে বরাদ্দপ্রাপ্ত আঞ্জু আখতার,রশিদা বেগম ও লাইলি বেগমের ঘরের তালা ভেঙে নিজেদের মানুষদেরকে ঢুকিয়ে দেয়।
বরাদ্ধপ্রাপ্ত আঞ্জু আখতার অভিযোগ করে বলেন,নারী ইউপি সদস্য রুবি আক্তার লোকজন নিয়ে এসে আমাকে ও আমার স্বামীকে মারধর করেছে।আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে তার লোকদের ঘুরে ঢুকিয়ে দিয়েছে।আমাদের সরকার থেকে ঘর দিয়েছে থাকার জন্য,কিন্তু আজ আমাদের ঘর কেরে নিলো।আমার নামের বরাদ্ধকৃত ঘর তিনি রাহিলা বেগম নামের একজনকে দিয়েছে।
জলেখা বেগম নামের আরেক বরাদ্ধপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলেন,বেশ কিছুদিন থেকেই ইউপি সদস্য রুবি আক্তার আমাদের ঘরটি নিয়ে নেয়ার জন্য নানা ভাবে হুমকি দিয়ে আসছে।আমাদের বলে তোরা গিয়ে মর এটা আমার লোকের ঘর।এভাবে যদি অত্যাচার করে তাহলে আমরা কি করবো।আজকে ঐ ইউপি সদস্য তার ছেলেসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে এসে আমাকে আমার ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।আমরা এটার সঠিক বিচার চাই।
নারী ইউপি সদস্য রুবি আক্তার বলেন,এখানে কোন মারধর হয়নি।এখানে ঘর নিয়ে বিভিন্ন ভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।আমার তালিকা থেকে ৩ জন মানুষকে ঘর দেয়া হয়নি,স্থানীয় চেয়ারম্যান ও অন্য ইউপি সদস্যরা টাকার বিনিময়ে অন্যদেরকে ঘর দিয়েছে।তাই আজকে আমি আমার ঐ তিনজন মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিয়ে এসে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছি।
চিলারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন,আমার ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর রয়েছে ২১৭ টি।এরমধ্যে আলাদিহাট ধনিবস্তি এলাকার গুচ্ছগ্রামে ঘর রয়েছে ৫৬টি।আশ্রণের ঘর বরাদ্দ অসহায় ব্যক্তিরা ঐ ঘরগুলোতে বসবাস করছে।তিনি আরো বলেন,নারী ইউপি সদস্য রুবি আক্তার ৫ জনের তালিকা দিয়েছিল।
যাচাই বাছাই শেষে তাদের সবাইকে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।এখানে কোন অর্থ লেনদেন হয়নি।আজকে অন্যের বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরে নারী ইউপি সদস্য রুবি আক্তার তার লোকদের ঢুকিয়ে দিয়েছে শুনেছি।এটি ঠিক কাজ করেছি,যার নামে বরাদ্দ রয়েছে তারাই সেই ঘরে থাকতে পারবে,এছাড়া ঐ ঘরে অন্য কেউ থাকতে পারবে না।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়েছে।এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,যার নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ হয়েছে তারাই সেই ঘরে বসবাস করতে পারবে।এখানে অন্য কেউ ঐ ঘরে বসবাস করারা সুযোগ নেই।
তিনি বলেন,চিলারং ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্য রুবি আক্তারের নামে অভিযোগ পেয়েছি তিনি অন্যের ঘরে তার লোকদের ঢুকিয়ে দিয়েছে।বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।