1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
জুড়ীর প্রাকৃতিক বনায়ন উজাড় করে লাগানো হচ্ছে নিষিদ্ধ গাছ
বাংলাদেশ । শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জুড়ীর প্রাকৃতিক বনায়ন উজাড় করে লাগানো হচ্ছে নিষিদ্ধ গাছ

তিমির বনিক :
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৪৮৪ বার পড়েছে

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার সংরক্ষিত পাথারিয়া রিজার্ভ ফরেস্টের লাঠিটিলা বনে প্রাকৃতিক গাছ-বাঁশ কেটে আকাশমণি গাছ রোপণ করে বনায়ন করছে বন বিভাগ। প্রাকৃতিক গাছ কেটে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর আকাশমণি গাছ লাগিয়ে বনায়ন করাকে লুটপাটের অংশ বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। বন যাদের রক্ষা করার কথা, সেই বন বিভাগের কর্মকর্তারা সংরক্ষিত বন ধ্বংসের খেলায় মেতেছে বলে অভিযোগ তাদের।

জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বিভাগের পূনঃবনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ‘উডলট বনায়ন’ এর আওতায় ১৫ হেক্টর জায়গায় ৩৭ হাজার ৫০০টি গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। প্রকল্পে চিক-রাশি, আকাশমণি, গামারি, কালোজাম, কদম, শিল কড়ই ইত্যাদি গাছ লাগানোর কথা থাকলেও শুধু আকাশমণি গাছ লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানোর কথা থাকলেও লাগানো হয়েছে শুধু আকাশমণি। আর এই বনায়নের জন্য প্রাকৃতিকভাবে বনে থাকা নানা জাতের উদ্ভিদ, বনের আদি গাছ এবং মুলি বাঁশ কাটা হয়েছে।

একইভাবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টের লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বেলবাড়ী এলাকায় মোট ৬৫ হেক্টর বাগান করা হয়। সেখানে ৪৫ হেক্টরই আকাশমণি। একই বিটের সমানভাগ বিট সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত বেকি হান্ডর এলাকায় উডলট বাগানে প্রায় ১৫ হেক্টর এবং সুফল প্রকল্পের আরও ১৫ হেক্টর জায়গাসহ ওই বিটে মোট ৭৫ হেক্টর বাগান করা হয়েছে, যার বেশিরভাগ গাছ আকাশমণি। তবে স্থানীয় সূত্রে পাওয়া এসব তথ্যের বিপরীতে বন বিভাগ কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংরক্ষিত বনে গাছ লাগানোর জন্য কেটে ফেলা হয়েছে পূর্বের প্রাকৃতিক লতা-পাতা, উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণীর খাবার যোগান দেয় এমন ফলের গাছ এবং বাঁশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাকৃতিক বন ও সুরমা বাঁশমহালের লক্ষাধিক বাঁশ কেটে প্রথমে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। এরপর এখানে গাছ লাগানো হয়েছে। যেসব জায়গায় বনায়ন করা হয়েছে তার বেশিরভাগ ছিল আগে থেকেই ঘন বন। সেসব নির্বিচারে উজাড় করে তা পুড়িয়ে ফেলে পরে গাছ লাগানো হয়েছে।

সংরক্ষিত বনের প্রাকৃতিক গাছ নষ্ট করে এভাবে কোটি কোটি টাকা খরচের বনায়নকে লুটপাটের অংশ এবং বন ধ্বংসের পাঁয়তারা বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। এমনকি খোদ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এটা খুবই খারাপ কাজ হয়েছে। আকাশমণি লাগাতে আপত্তি নেই, তবে মৌখিকভাবে বলে দেওয়া হয় যেন ২০ শতাংশের বেশি না হয়। আকাশমণি লাগালে পাখিরা এসব গাছে বসে না। অন্য প্রাণীরাও আসে না। একটি সমৃদ্ধ বনের গাছ কেটে এভাবে বনায়ন করার কারণে বন্যপ্রাণীদের ক্ষতি হলো। এখানে যেসব বন্যপ্রাণী থাকতো তারা অন্যত্র চলে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মুনতাসির আকাশ জানান, এভাবে বনের আদি গাছ-বাঁশ কেটে বনায়ন করলে প্রাণীদের আবাসস্থল নষ্ট হয়। বিশেষ করে বাঁশ ভাল্লুক, মার্টিনসহ বেশ কিছু প্রাণী আছে যারা এখন প্রায় বিপন্নের কাছাকাছি। এরা ছাড়াও এখানে অনেক সরিসৃপের বাসস্থান থাকতে পারে। সংরক্ষিত বনে যদি তাদের আবাস ঠিক না থাকে, তাহলে এসব প্রাণী বিপন্ন হয়ে যাবে।

বন বিভাগের জুড়ী রেঞ্জের রেঞ্জা অফিসার মো. আলাউদ্দিন জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে সুফলসহ বিভিন্ন প্রজেক্টের অধীনে এখানে বনায়ন করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরেও কিছু বনায়ন করা হবে। আকাশমণি গাছের ব্যাপারে তিনি বলেন, শুধু আকাশমণি না, সব ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে।

বনায়ন করতে গিয়ে সংরক্ষিত বন এভাবে ধ্বংস করতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বাঁশ-গাছ তেমন কাটিনি। কিছু ঝোপ-ঝাড় কেটেছি। আমরা মূলত বনের খালি জায়গায় বনায়ন করেছি। স্থানীয়রা অহেতুক বাড়িয়ে মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছে।

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, বনায়ন করতে গিয়ে সংরক্ষিত এই বনের প্রচুর গাছ কাটা হয়েছে। ছোট ছোট বিভিন্ন গাছ যেগুলো বাংলাদেশের আদি গাছ হিসেবে পরিচিত, ঝোপ-ঝাড়সহ সেসব গাছ কাটা হয়েছে এবং সেই গাছ সে স্থানেই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাঁশ কাটা হয়েছে সুমরা ও হলম্পা বাঁশমহালে।

জামালি গ্রামের জামাল মিয়া জানান, এখানে বনের গাছ-বাঁশ কেটে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। গাছগুলো ছোট ছোট। এগুলো সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়েছিল। কয়েক লাখ বাঁশ কাটা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম জানান, বন বিভাগের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী বনবিরোধী কাজ করে যাচ্ছেন। লাঠিটিলা একটি সমৃদ্ধ ও সংরক্ষিত বন। এই বনের প্রাকৃতিক গাছ-বাঁশ কেটে বনায়নকরার কী প্রয়োজন? সুফলসহ বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে বন বিভাগ যত আগ্রহী তার ১ শতাংশ যদি বন রক্ষায় প্রতি থাকতো তবু কিছুটা সান্ত্বনা মিলতো।

সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে নতুন যোগাদান করেছি। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। তবে এভাবে বন ধ্বংস করে বনায়ন করার যুক্তি নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ঘটনা সত্য হলে এবং বনবিরোধী কিছু হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, ধারণা করা হয় এই বনে ২০০ প্রজাতির প্রাণী আছে। এটি সিলেট বিভাগের একমাত্র বন যে বনে হাতির দেখা মেলে। মৌলভীবাজার শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সিলেট বন বিভাগের জুড়ী ফরেস্ট রেঞ্জের লাঠিটিলা পাথারিয়া হিল রিজার্ভ ফরেস্টের একটি অংশ। লাঠিটিলার আয়তন ২০ বর্গ কিলোমিটার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD