রাজবাড়ী জেলার চার উপজেলার মধ্যে করোনায় আক্রান্তের হার সব চাইতে বেশি গোয়ালন্দন উপজেলায়। আক্রান্তের হার বেড়ে চলার পাশাপাশি থেমে নেই মৃত্যুও। এ উপজেলায় বেশির ভাগ বাড়িতে মানুষজন জ্বর-সর্দি-কাশি ও গলাব্যথায় ভুগছেন।এদের মধ্যে কেউ কেউ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিলেও অনেকে যাচ্ছেন না সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকার ভয়ে।
তাদের অভিমত, অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে করোনা আক্রান্তের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি করোনার টেস্ট করতে গেলে কক্ষে গাদাগাদি অবস্থা তৈরি হচ্ছে এবং এখনও সামাজিকভাবে করোনার পজিটিভ ব্যক্তিকে ভিন্ন চোখে দেখা হচ্ছে।বুধবার (১৪ জুলাই) উপজেলায় বেশ কিছু এলাকায় জ্বর-সর্দি-কাশি ও গলাব্যথায় ভুগছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা এভাবেই বলছিলেন। তবে ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তদের বিষয়ে অবহেলা না করে দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা নেয়ার পারমর্শ দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কালাম শেখ এর ছেলে কাউছার শেখ বলেন, ৩০ জুন রাতে হঠাৎ করেই অনেক জ্বর আসে। পরদিন সকালে সর্দিও শুরু হয়। পরে স্থানীয় ওষুধের দোকানে নিজেই গেছি। সেখান থেকে নাপাসহ বেশকিছু ওষুধ নিয়ে বাসায় এসে খেয়েছি। এরপর ১২ জুলাই আমি সুস্থ হয়ে উঠি। করোনার টেস্ট করালেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের করোনা হবে না। এছাড়া হাসপাতালে গেলে তো করোনা আরো বেড়ে যাবে। তাই বাসায় ওষুধ খেয়ে এখন সুস্থ।
পৌর শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বর-সর্দি নিয়ে তিনিও রয়েছেন বাসায়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় ওষুধ খাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে শরীরে জ্বর না থাকলেও নেই খাওয়ার রুচি। এরপরেও যাবেন না হাসপাতালে করোনা টেস্ট করাতে। তিনি মনে করছেন, তার যদি করোনা নাও থাকে তাহলে হাসপাতালে গেলে করোনা ধরে যাবে। কারণ সেখানে অনেক মানুষের সমাগম।
হাসপাতালের সামনে কথা হয় ওষুধ ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান এর সঙ্গে। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই দেখছি জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে অনেকই আসছেন ওষুধ কিনতে। বিভিন্ন কোম্পানির নাপা ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আগে কখনো এভাবে বিক্রি হতো না এসব ওষুধ। এখন অনকে বেশি হচ্ছে। এ কারণে প্যারাসিটামল ও নাপাসহ কয়েকটি ওষুধের সঙ্কট দেখা দিয়েছে উপজেলার দোকান ও ফার্মেসীগুলোতে। কোম্পানি সাপ্লাইও দিতে পাড়ছে না।
এসব বিষয়ে কথা হলে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র আবাসিক মেডিকেল অফিসার নিতাই কুমার ঘোষ বলেন, আপনারা জানেন আমাদের উপজেলায় কীভাবে দিনের পর দিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বর্তমানে ঘরে ঘরেই কিন্তু জ্বর-সর্দি-কাশি লেগেই আছে। বিশেষ করে গ্রাম সাইডের দিকে। এদের মধ্যে অনেকেই আসছেন না করোনার পরীক্ষা করাতে। আমি মনে করি এটি তারা ভুল করছেন।
করোনা টেস্টের জায়গায় অতিরিক্ত গাদাগাদির ভয়ে অনেকেই আসছেন না টেস্ট করাতে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে করোনা যেখানে টেস্ট করা হয় সেখানে সব সময় গাদাগাদি হয় বিষয়টি ঠিক তেমন না। রোগীর সংখ্যা কিছু কিছু সময় অনেক বেড়ে যায়। এরপরেও আমরা স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি লক্ষ্য রাখি। আর মানুষ এর ভয়ে আসবে না এটাও ভুল। মানুষের মূল ভয়টি কাজ করছে পজিটিভ আসার। আরেকটি বিষয় পজিটিভ হলে সমাজের অন্যরা তাকে বাঁকা চোখে দেখবে। হাসপাতালে ভিড় সেখানে গেলে করোনা হবে এগুলা অজুহাত।
তিনি আরো বলেন,উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জ্বর-সর্দি নিয়ে বাজারেসহ বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রাম সাইড এলাকাগুলোতে অনেক মানুষ আছে যারা কিছু মানতে চান না। তাদের জ্বর হলেও কিছু হবে না। আবার বলে গরিবের নাকি করোনা হবে না। শুধু গ্রামে না আজকাল শহরেও আছে এমন। এখানে ভয়ের কিছু নেই। করোনার পজিটিভ হলে আমরা ডাক্তাররা কেন আছি। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা সঠিক চিকিৎসা দিচ্ছি। এভাবে অসচেতন না হয়ে সচেতন হতে হবে। তা না হলে বিপদ হয়ে যাবে বড় ধরনের।