গাইবান্ধা জেলা পরিষদের আওতাধীন প্রায় ১ দশমিক ৫ একরের একটি শতবর্ষী পুকুর রক্ষায় হাইকোর্ট ৬ মাসের রুল জারি করেছেন।গত ৫ সেপ্টেম্বর রোববার বিচারপতি মোঃ এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।পুকুর ভরাট বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থমূলক মামলা করলে হাইকোর্ট প্রাাথমিক শুনানি শেষে এই রুল দেন।বেলার রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যালের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,মাটি ভরাট থেকে পুকুর রক্ষা,পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি,আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ভরাটকৃত মাটি অপসারণ করে পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না,তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ওই পুকুরে মাটি ভরাট ও ভরাটকৃত স্থানে অডিটরিয়াামসহ অন্য যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বেলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী।
উচ্চ আদালতে আবেদনে উল্লেখ করা হয়,দীর্ঘদিন ধরে এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম প্রধান আধার হিসেবে পুকুরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বন্যা পরবর্তী সময়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে এই পুকুরের অবদান অনস্বীকার্য। গাইবান্ধা শহরের ঐতিহাসিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষার্থে এই পুকুরের বিশেষ অবদান রয়েছে।
জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দেশের বিদ্যমান আইন ও আদেশ অমান্য করে পুকুরটি ভরাট করে সেখানে মাল্টিপারপাস বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।ইতোমধ্যে পুকুরটি ভরাট করে এক হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল নির্মাণের দরপত্র আহ্বানের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয়।চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি এই প্রকল্পের আওতায় পুকুরটিতে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয়।
প্রাচীন এই পুকুর ভরাট হয়ে গেলে আশপাশে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে এবং এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হবে বলে এলাকাবাসীর আশঙ্কা।পুকুর ভরাটের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে এবং পুকুর রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন।কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকাবাসী বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বরাবর আইনি সহায়তার জন্য চলতি বছরের ১৮ মার্চ আবেদন করেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ আটজনকে বিবাদী করে জনস্বার্থে বেলা মামলাটি করে।বেলার পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর মামলাটি দায়ের করেন।মামলার বিবাদীরা হচ্ছেন পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব,পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক,গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক,গাইবান্ধার পুলিশ সুপার,গাইবান্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান,পরিবেশ অধিদপ্তর (বিভাগীয় কার্যালয়) রংপুরের পরিচালক,গাইবান্ধা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও গাইবান্ধা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,সব কথা ফোনে বলা যায় না।সাক্ষাতে কথা বলা যাবে।জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রউফ তালুকদার মোবাইল ফোনে বলেন,এডিপির অর্থায়নে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাংলাদেশ সরকারের একটি মেগা প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে দশটি অডিটোরিয়ামের মধ্যে গাইবান্ধায় একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।টেন্ডারের পর যথারীতি পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়।
তিনি বলেন,পুকুরটি একটা মজা পুকুর ছিল।মহামান্য হাইকোর্ট রুল ও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।এর আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।আমরা সে চিঠি পেয়ে পুকুরের মাটি ভরাটের কাজ স্থগিত করেছি।এলাকাবাসীর পক্ষে বেলার কাছে আবেদনকারী গাইবান্ধা জেলা অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল করিম লাছু হাইকোর্টের রুলে সন্তোষ প্রকাশ করেন।তিনি বলেন,এই রুলে শতবর্ষী পুকুরসহ পরিবেশ রক্ষা পাবে।