গরীবের মাংসের চাহিদা মেটানো ব্রয়লার মুরগির দাম এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে কেজি প্রতি ৭০ টাকা। স্বল্পমূল্যের এই মাংসটি ২০০ টাকা কেজি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো।
অন্যান্য মাংস কেনার সামর্থ্য না থাকলেও ব্রয়লার মুরগির মাংস ছিল মাংস চাহিদা মেটানোর অন্য উপায়। কিন্তু দাম বৃদ্ধিতে হাওয়ায় তাও নাভিশ্বাসে পৌঁছেছে। দাম চড়ার ফলে হতাশায় ভুগছেন নি¤œ ও মধ্যবিত্তরা। এখন ব্রয়লার মুরগির মাংস কিনছেন ধনীরাও।
রবিবার (৫ মার্চ) সকালে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লারসহ অন্যান্য জাতের মুরগির উর্ধগতি দামের চিত্র। অস্বাভাবিক দামের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন ভোক্তারা। বর্তমান বাজারে ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ২০০ টাকা দামে। অথচ একমাস আগে এর দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।
শুধু ব্রয়লারেই নয়, বাজারে প্রতিকেজি সোনালী মুরগি ২৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা, গরু মাংস ৬৬০ টাকা ও ছাগলের মাংস ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দিনদিনে সবধরণের নিত্যপণ্যসহ মুরগির অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় হতাশ হচ্ছেন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা। এখন অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বলছেন, ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক কারণে তারা মাংস খাওয়া ছাড়বেন।
ফুলবাড়ী পৌরবাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা আজিজার রহমান নামের এক রিকশাচালক ও দিনমজুর মমতাজ উদ্দিন বলেন, আয়-রোজগার কম ও দ্রব্যমূল্য বেশি হওয়ায় মাসেও একদিনও মাংস খেতে পারিনা। তবে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসলে কম দামে ব্রয়লার মাংস কেনা হতো। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়া এখন তাও কেনা সম্ভব নয়।
ভুবেশ চন্দ্র রায় নামের আরেক দিনমজুর ব্যক্তি বলেন, পরিবারের আবদারে বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসেছিলাম। এসে জানতে পারি মুরগির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দুইকেজি মাংস কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম চড়ার কারণে এক কেজির ছোট একটি ব্রয়লার মুরগি কিনে বাড়ি ফিরছি।
উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের খড়মপুর গ্রাম থেকে শহরে আসা আমিনা বেগম বলেন, গ্রামের হাট-বাজারগুলোর মুরগির দোকানগুলোতে শহর থেকে কিনে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। তাই শহরে জমির কাজে এসেছিলাম। ভাবলাম এখানে কমদামে ব্রয়লাম মুরগি পাবো। কিন্তু চিত্র ভিন্ন। এখানে এসে জানতে পারি মুরগির দাম আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ২০০ টাকা কেজিতে দুই কেজি মাংস কিনেছি।
চকচকা গ্রাম থেকে আসা মোবাশের আলী নামের এক কৃষক বলেন, আগে মাসে এক-দু’দিন গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া হতো। এরই মধ্যে এসব মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা খাওয়া বাদ দিয়েছি। ফের ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধিতে এটাও এখন খাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফুলবাড়ী পৌরবাজারের মাহি পোল্ট্রি হাউজের সত্ত্বাধিকারী মোজাফফর হোসেন ও ফাইজা পোল্ট্রি হাউজের সত্ত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত এক মাস আগে ব্রয়লাম মুরগির মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ১৩০ টাকা। তা দিনে দিনে ১০ টাকা করে বাড়তে বাড়তে ২২০ টাকায় পৌঁছে।
বর্তমানে ২০০ টাকা কেজিদরে এ মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে। লোকসানে পড়ে স্থানীয় খামার কমে যাওয়ায় বাহির থেকে বেশি দামে মুরগি নিতে হচ্ছে। তাই মুরগি বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কাজী ফার্ম, সেগুনা ও প্যারাগন ফার্মের নির্ধারিত মূল্যেই ব্রয়লাম মুরগি বিক্রি করা হয়।
পোল্ট্রি খামারি সোহেল রানা ও জীবন প্রসাদ বলেন, বাচ্চা-ফিড-ওষুধ ও অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া অধিকাংশ খামার বন্ধ হয়েছে। তাই মানুষের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে কম। এ কারণে দাম বেড়েছে অনেকটা। তবুও খামার ব্যবসায় ভাটা পড়ছে।
চমক পোল্ট্রি ফিডের সত্ত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, হঠাৎ-ই ফিডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৫ দিনে পূর্বে প্রতি বস্তার (৫০ কেজির বস্তা) ফিডের মূল্য ছিল ৩ হাজার ৫০০ টাকা, যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৬৫০ টাকা হয়েছে। প্রতিনিয়ত এভাবেই দাম বাড়ছে। এই বস্তার মূল্যে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। পর্যায়ক্রমে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৬৫০ টাকা।