কিয়ের যে করোনা আইল, আমাগো গরীবদের একেবারে শেষ করে দিল গো স্যার।আইলো করোনা, দিল লকডাউন।তারপরে আবার কি যেন কিয়ের শাটডাউন।ঘাটে নৌকা বন্ধ। মানুষও পারয়না। তারপরও বসে আছি।পেটেতো আর করোনা লকডাউন মানে নাগো স্যার।এভাবে চললে তো বউ পোলাপান লইয়া না খাইয়্যা এমনি মরে যামু।কেউ তো আধা কেজি চালও দেয় না।”এমনি করে মনের ক্ষোভে কথাগুলো বলছিলেন বালুনদীর নগরপাড়া খেয়া ঘাটের মাঝি হেলাল উদ্দিন।চরম অভাব অনটন আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন খেয়া ঘাটের মাঝিরা।করোনার কারণে নৌ-যান চলাচল বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন উপজেলার শতাধিক ঘাটের মাঝি।আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় সংকটে পড়েছেন তারা।এতে থমকে গেছে তাদের জীবন জীবিকা।কবে নৌ-যান চলাচল শুরু হবে তখন তারা কাজে ফিরতে পারবেন সে অপেক্ষায় দিন গুণছেন।
জানা গেছে, উপজেলায় ঘাট রয়েছে ১২টি।ওইসব ঘাটকে কেন্দ্র করে ঘাট শ্রমিকদের জীবিকা।নৌ-যান চলাচল করলে এসব ঘাট সরগরম থাকে। এতে মালামাল পরিবহন করে শ্রমিকরা আয়-রোজগার করে সংসার চালিয়ে থাকেন।কিন্তু গত এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাসের কারণে ভালো নেই এই ঘাটের নৌ শ্রমিকরা। এর মধ্যে আবার গত ১০ দিন কঠোর লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে নৌ-যান চলাচল।এতে বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।বালুনদীর নগরপাড়া ঘাট, পশ্চিমগাও এবং শীতলক্ষ্যা নদীর বড়ালু ঘাট, মঠের ঘাটসহ বেশকয়েকটি খেয়া ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, পুরো এলাকায় সুনশান নিরবতা।ঘাটে ব্যস্ততা নেই, নেই কোনো যাত্রী।যেখানে হকার ও শ্রমিকের হাঁকডাকে মুখরিত থাকে সেই ঘাটগুলোর এখন ভিন্ন চিত্র। চিরচেনা দৃশ্য পাল্টে গেছে। পুরো এলাকায় মানুষের সমাগম নেই। ঘাটে দেখা নেই শ্রমিকদের। তবে দু’চারজন শ্রমিককে আবার অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
তাদের মধ্যে একজন আনোয়ার।তিনি জানালেন, ঘাটে লোকজন নেই। তাই মাঝি নেই, নেই নৌকাও। কাজ বন্ধ। সবাই বেকার হয়ে গেছেন। তাদের মত আমিও ভালো নেই। লকডাউনের আগে যখন মানুষ চলাচল করতো, তখন প্রতিদিন ২শ থেকে ৩শ টাকা রোজগার করছি। এখন সব রোজগার বন্ধ, পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে কষ্টে আছি।মঠের ঘাটের মাঝি নুরা মিয়া দেখেই এগিয়ে এসে বলতে থাকেন, স্যার কাম আছে, যে কোনো কাম। ঘরে বউ পোনাপান লইয়্যা বড় বিপদে আছি গো স্যার। দেন না একটা কাম।একই কথা জানালেন মঠের ঘাটের অপর মাঝি কাইয়ুম। তিনি বলেন, এখন আর আগের মত ঘাটে কেউ আসে না। আমরা ঘাটেই কাজ করতাম, কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অভাবের মধ্যে আছি। অন্য কাজেও যেতে পারছি না।
বালুনদীর নগরপাড়া ঘাটের মাঝি মকরম জানান, এখানে ২০/২৫ জন মাঝি ছিলো। এখন তাদের সবার আয় বন্ধ। সবাই কষ্টে আছেন। গত বছর লকডাউনে কম বেশি আমরা সবাই সহযোগিতা পেয়েছি, কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না।
বড়ালু ঘাটের আকবর মিয়া বলেন, আমাদের এখানে ২৪ জন শ্রমিক রয়েছে, লকডাউনে তাদের সবার জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে সীমাহীন কষ্টে আছেন। আমাদের সহযোগিতা করা হোক সরকারের কাছে আমাদের এটাই দাবি।নগরপাড়া খেয়া ঘাটের ইজারাদার প্রতিনিধি নিতাই পাটনী জানান, ঘাট মাঝিরা যেমন কষ্টে আছেন, তেমন ঘাটের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যরাও কষ্টে আছেন।মাঝিদের ঘাটে এখন দেখা যায় না। পরিবার নিয়ে অভাব অনটনে ভালো নেই তারা।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান জানান, তারা অনেক কষ্টে আছেন।তাদের কাজ বন্ধ-রোজগার বন্ধ। গত বছর লকডাউনে আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। সরকারিভাবে কোনো কিছু এলে তালিকা তৈরির মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা হবে।