অর্থ-প্রতিপত্তি, সম্মান, যোগ্যতা ও অবস্থান সবার সমান নয়। হিটলার অনেক বেশি শক্তিশালী থাকলেও সে কিন্তু সবার আদর্শ নয়। আবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলেও অনেকেই তাকে সহ্য করতে পারে না। তারও বিবিধ কারণ আছে। প্রধান কারণ তিনি সকল মানুষের উপর সমানভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না। তার দেশের কোনো প্রেসিডেন্টই পারেননি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমেরিকা সারাবিশ্বে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে অস্ত্র বিক্রি ও তেল চুরি করে নিজ স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত রয়েছে। তাদের ছত্রছায়ায় থেকে ইজরায়েল হাজারটা অন্যায় করলেও কেউ তাদের বিচার করতে পারছে না। তাদের অহংকারী বুলেট ও বোমা প্রতিদিন মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করছে। তাদের পাশাপাশি চীন উইঘুর মুসলিমদের উপর অমানষিক নির্যাতন চালাচ্ছে। এদিকে মায়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর কি করছে, সবারই জানা। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে আছে। তাদের নেওয়ার মত তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ বিশ্ববাসী ও মায়ানমারের দেখা যাচ্ছে না। সেদেশে প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হয়ে নির্মমভাবে মানুষ খুন অব্যাহত রয়েছে। তাদের কেউ কিছু বলছে না, কেউ কিছু করতে পারছে না। কারণ তাদের পাশে ছায়ার মত চীন রয়েছে। তারা তাদের স্বার্থ হাসিলের হীন চেষ্টায় মগ্ন থেকে মায়ানমারের সকল অন্যায়কে বৈধ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আমাদের দেশেও বহু মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতন বা হত্যার শিকার হচ্ছে। কিছু ঘটনা ঘটছে রাজনৈতিক কারণে, কিছু ঘটছে অর্থ-প্রতিপত্তির কারণে, কিছু ঘটছে পারিবারিক কারণে।
এমনই চলছে বিশ্বব্যাপী। কোথাও তেমন সুন্দর কোনো সুবিচার নেই। ভারতে মুসলমানরা বিচার পায় না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা কোনো কোনো সময় অসহায় হয়ে পড়ে, হামলা ও ভাংচুরের শিকার হয় অনেকেই। বিচার নেই জাতিসংঘে, বিচার নেই আন্তর্জাতিক আদালতে, বিচার নেই দেশে, বিচার নেই সমাজে, বিচার নেই পরিবারে, বিচার নেই জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসার প্রিয় মানুষের কাছে। আপনি যাকে জীবন দিয়ে ভালোবাসেন, সে আপনাকে এমনভাবে ভালোবাসে না। হয়ত নীরবে নিভৃতে করে যাচ্ছে ছলনা। মাঝেমধ্যে আপনাকে আমাকে এসব জেনেও তাকে ভালোবাসতে হয়। কারণ তার সাথে ইতিমধ্যে অনেক স্বার্থ জড়িয়ে গেছে। সে হয়ে গেছে আপনার সন্তানের মা বা বাবা অথবা তার কাছে আপনার অনেক টাকা গচ্ছিত রয়েছে। তাই এই সুন্দর পৃথিবীতে বহু ক্ষমতাধর ও ধনী ব্যক্তি নিজ পরিবারের কাছে জিম্মি। না পারছে কাউকে বলতে, না পারছে এসব সমস্যার সমাধান করতে। তাই এই জগতে ক্ষমতা, টাকা সহ আরো অনেক যোগ্যতা থাকলেও এখানে সুখী মানুষের বড্ড অভাব। আপনি সুখী মানুষের সন্ধান করতে গেলে দেখবেন, খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হবেন, তবু একজন সুখী মানুষ খুঁজে পাবেন না। প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে অভাবগ্রস্থ। কারো টাকা নেই, কারো বাড়িঘর নেই, কারো বাড়িঘরের অভাব নেই, কেউ অসুস্থ, কেউ সুস্থ হলেও অন্য সমস্যায় জর্জরিত। মোটকথা অভাব নেই বা সমস্যায় নেই এ পৃথিবীতে এমন মানুষের দেখা পাওয়া কঠিন। তবু আমাদের নিজ নিজ অবস্থানে সুখী থাকতে হবে, সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অধিকতর সুন্দর, সুখী ও স্বাচ্ছন্দময় জীবন চালিয়ে নিতে হবে।
অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় ক্ষমতাসীন অথবা ক্ষমতাহীন যেকোনো লোক বেশি ক্ষমতা দেখালে সাধারণ মানুষের কাছে একটা সময় গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক বেশি মিথ্যা বলতেন, অনেক বেশি ক্ষমতা দেখাতেন। তিনিও আজ ক্ষমতাহীন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনও একসময় ক্ষমতাহীন হয়ে যাবেন। তার জায়গা দখল করবেন আরেকজন। বিশ্ব চলবে আরেক নতুন নিয়মে। এসবকে মেনে নিতে হবে। তাই নিজেকে সাধ্য পরিমাণে নিরহংকার ও মানবিকভাবে উপস্থাপন করা সবার ক্ষেত্রেই জরুরি। আপনার ক্ষমতা আছে, তাই বলে আপনি সব নিরীহ মানুষকে মেরে পেলতে পারেন না। কারো স্বাধীনতায় অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। আবার আপনী পাওয়ারলেস, তাই বলে কোনো সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানও নষ্ট করতে পারেন না, বেফাঁস মন্তব্য করতে পারেন না। এটা আপনার সাথে যায় না। তাছাড়া ক্ষমতা থাকলেই তা যেখানে সেখানে প্রয়োগ করলে সাধারণ মানুষ মুখ চেপে হাসবে, উপহাস করবে। সবাই সবার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হওয়া জরুরী। আমি অমুকের ছেলে, তমুকের ভাই। তাই সবাইকে আমার কথা মানতে হবে, বিষয়টি তা নয়। ১০০% মানুষ আপনার কথা মানবে না। কিছু লোক আপনার বিরোধিতা করবে, আপনার বিরুদ্ধে কথা বলবেই। আপনী প্রেসিডেন্ট হওয়ায় সবার কাছে আপনি অবশ্যই সম্মানের পাত্র। এটা ভাবা ঠিক আছে। তারপরও কিছু মানুষ আপনাকে সম্মান করবে না। আপনি যত ভালো মানুষই হোন না কেন, শতভাগ মানুষ আপনার কথা শুনবে না। এ বিষয়টি আপনাকে সহজভাবে মেনে নিতে হবে। বিষয়টি মানানসই ধাঁচের নাহলে সাধারণ পাবলিক আপনার উপর বিরক্ত হবে, আপনার বিরুদ্ধে কথা বলবে। সবকিছুরই একটা সীমা আছে। সীমা লঙ্ঘনকারীকে স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালাও পছন্দ করেন না।
এই অপরূপ পৃথিবী আমাদের পরম করুণাময় অসীম দয়ালু সুমহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন আমাদের সবাইকে। তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা ক্ষমতাচ্যুত করেন। কাউকে রাজা বানান আবার কাউকে ফকির বানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরান। তাই কোনো ফকির মিসকিন বা কোনো অসহায় মানুষকে অবহেলা, অবজ্ঞা, ঘৃণা বা নির্যাতন করবেন না। কারণ আপনারও অবস্থা আল্লাহ চাইলে তার মত হতে পারে। আপনারা হয়ত অবগত আছেন, মহান আল্লাহ তা’য়ালা তার প্রতিটি সৃষ্টিকে খুব ভালোবাসেন। এমনকি মায়ের চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসেন। অনেক যত্নে, অনেক গুরুত্ব দিয়ে তিনি সেরা সৃষ্টি মানুষকে অতি উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহর কোনো সৃষ্টজীব বিনা অপরাধে যেন আপনার কারণে কষ্ট না পায়, নির্যাতিত না হয়; —এই আহবান রাখছি সবার নিকট। বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার প্রয়োগ হোক ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে। আমার ভাই বা ছেলে বলে তার অপরাধ দেখেও দেখব না আবার অন্যের ছোট অপরাধও অনেক বড় করে দেখাটা অন্যায়। ন্যায়, সততা, ইনসাফ, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির আলোয় আলোকিত হোক আমাদের প্রতিদিনের প্রতিটি মুহূর্ত।