কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে গত দুই বছর ধরে চায়না দুয়ারী নামের বিশেষ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে নির্বিচারে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় জেলেরা।খুব সহজে বেশি মাছ ধরার এই ফাঁদ ব্যবহারে ভবিষ্যতে দেশী প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।তবে পদ্মায় চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ নিধনের দুই বছরে একদিনও খোঁজ নিতে যাননি উপজেলা মৎস্য অফিসের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী।
জানা গেছে,মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ংকর চায়না দুয়ারী নামক ফাঁদে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ ধরা পড়ছে।সহজেই সব ধরনের মাছ ধরার আশায় পদ্মা নদীজুড়ে জেলেরা অহরহ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন এ জাল।পদ্মায় থাকা মিঠাপানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সূক্ষ এ জালের ফাঁদে ধরা পড়ছে।
বিশেষ করে নদীর পানি বৃদ্ধি,হ্রাস ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি,পুঁটি,টেংরা,কৈ,শিং,মাগুর,তেলাপিয়া,বেলে,বোয়াল,শোল,টাকিসহ দেশী প্রজাতির সব মাছ এ চায়না দুয়ারী জালে নিধন হচ্ছে।এতে ক্রমেই মাছশূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিল ও ছোট নদীগুলো।
চায়না দুয়ারী জাল সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা এবং ৬০ থেকে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ক্ষুদ্র ফাঁসবিশিষ্ট ঢলুক আকৃতির হয়ে থাকে।লোহার চারটি রড ও রডের রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারে বক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ জাল দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয়।এই ফাঁদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নদীর তলদেশে লম্বালম্বিভাবে লেগে থাকে।ফলে কোনো ধরনের খাদ্যদ্রব্য ছাড়াই দুদিক থেকেই মাছ ঢুকে আটকা পড়ে।তবে কেউ কেউ অতিরিক্ত মাছের আশায় ঘ্রাণ জাতীয় মাছের খাবার দিয়ে থাকে।একটি চায়না দুয়ারীর দাম (মানভেদে) ৪-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
উপজেলার বাহিরমাদী চরের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান জানান,বিকেল হলেই ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে এই চায়না দুয়ারী নদীতে ফেলা হয়।সারারাত নদীতে রাখার পর সকালে তুলে আনা হয় পাড়ে।এ সময় জালে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় সব মাছ,নদীতে থাকা জলজ প্রাণী এমনকি ছেঁকে ওঠে মাছের ডিমও।এ জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়তো নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়াই কঠিন হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকারি জেলেরা বলেন,গত দুই বছর ধরে মাছ শিকার করছি কিন্তু কোন মৎস্য অফিসের লোক বা প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা আমাদের কখনো নিষেধ বা বাধা প্রদান করেনি।তবে চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ ধরাঠিক না,তার পরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরি।চায়না দুয়ারি দেশীয় জাতের মাছ ধ্বংস করছে এই ফাঁদ প্রতিরোধ করতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জেলার সব উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিলেও দৌলতপুরের মৎস্য কর্মকর্তা অদ্যবধি জানেননা।
পদ্মানদীতে চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকারের খবরটি মৎস্য কর্মকর্তা খন্দকার সহিদুর রহমানের জানা নাই।তবে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে মাত্র ১২ কিঃমিঃ দুরত্বে পদ্মানদীতে মাছের বংস ধ্বংসকারী চায়না দুয়ারী জালের বিরুদ্ধে গত দুই বছরেও কোন অভিযান না হওয়ায় মৎস্য কর্মকর্তা সহিদুর রহমানের মৎস্য শিকারীদের সাথে গোপন চুক্তি থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে মনে করেন পদ্মাপাড় এলাকার সুধীমহল।