কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র,আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল ও তাঁর সহযোগী ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ সভাপতি হত্যা মামলার তিন আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় এই খুনের ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে তার পরিবার ও স্বজনরা। নিহত সোহেলের পরিবার, এলাকাবাসী, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা এমন আশঙ্কার কথা জানান।তবে নেপথ্যে যারা ছিল, তাদের খুঁজে বের করার দাবি জানান তাঁরা। পুলিশের দাবি, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কেউ থাকলে অবশ্যই তদন্তে বেরিয়ে আসবে। মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম গত বুধবার দিবাগত রাতে এবং ৩ নম্বর আসামি মো. সাব্বির হোসেন ও ৫ নম্বর আসামি সাজন গত সোমবার দিবাগত রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, কাউন্সিলর সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি ৬জন অংশ নেন। নিহত এই তিনজন ছাড়াও মামলার ২ নম্বর আসামি সোহেল মিয়া ওরফে জেল সোহেল, এজাহারবহির্ভূত কুমিল্লা নগরীর নাজিম ও ফেনী থেকে আসা অজ্ঞাতপরিচয় আরেক যুবক ছিলেন। ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি বন্দুকযুদ্ধে মামলার তিন আসামি নিহত হওয়ায় নিহত সোহেলের পরিবারসহ সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।নিহত সোহেলের ছেলে সৈয়দ মো.নাদিম বলেন,আমরা মনে করি, হত্যাকাণ্ডের পেছনে অবশ্যই প্রভাবশালী কোনো মহলের হাত রয়েছে। পুরো ঘটনাই ছিল পরিকল্পিত। খুনিরা ধরা পড়লে পেছনের মদদদাতাদের সামনে আনা সহজ হতো।
আমরা মনে করি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে এখনো সেটি পারে।’সোহেলের ভাই ও মামলার বাদী সৈয়দ মো. রুমন বলেন,শাহ আলমদের কারা এত বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক অস্ত্রের জোগান দিল? এই হত্যাকাণ্ডের অর্থদাতা কারা, তাদের উদ্দেশ্য কী? খুনের মূল পরিকল্পনাকারী কে? শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা গেলে সহজেই সব কিছু জানা যেত। এ জন্য সবাই চেয়েছিল,শাহ আলম গ্রেপ্তার হোক।’ রুমন আরো বলেন, সোহেলকে সরিয়ে নেপথ্যের ইন্ধনদাতারা তাদের পথের কাঁটা পরিষ্কার করেছে। হত্যার পেছনে মাদকের কথা উঠে এলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়টিও থাকতে পারে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার চকবাজার ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক মো. কায়সার হামিদ বলেন, ‘সব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে। আশা করছি,শিগগিরই সব সত্য সামনে আসবে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নেপথ্যে কেউ থাকলে পার পেয়ে যাবে, এমন ভাবার কারণ নেই।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘আমরা চাই, হত্যাকাণ্ডের পেছনে কেউ থাকলে সামনে আসুক। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি হোক।’ হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া বাকি দুজনও শনাক্ত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া ছয়জনের মধ্যে চারজন মামলার আসামি। বাকি দুজন অজ্ঞাতপরিচয় ছিলেন। পুলিশের প্রকাশ করা সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে শাহ আলমের পেছনে পিস্তল হাতে থাকা ব্যক্তি নাজিম বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তাঁর বাড়ি নগরীর শুভপুর এলাকায়। তিনি গ্রিলমিস্ত্রি নাজিম ওরফে পিচ্চি নাজিম নামেই এলাকায় পরিচিত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. কায়সার হামিদ বলেন,ফেনী থেকে আসা যুবকের পরিচয়ও পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত জানানো যাচ্ছে না। আশা করছি, দ্রুত জেল সোহেলসহ বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করতে পারব।’ এদিকে, কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে গত শুক্রবার মানববন্ধন করেছেন মুসল্লিরা। বাদ জুমা স্থায়ীয় পাথুরিয়াপাড়া মসজিদের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়।