বহুল আলোচিত ক্যাসিনোর আদলে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া পরিচালনাকারী চক্রের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। এ চক্রের মিল্লাত হোসেন (২৮) নামের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার ভোর রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া এলাকায় র্যাব-কুমিল্লা ক্যাম্পের একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে। এ অভিযানে অনলাইনে জুয়া পরিচালনার মাধ্যমে অর্জিত নগদ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা, ১১টি মোবাইল ফোন, ১৪টি সীমকার্ড, ১টি ল্যাপটপ ও ৩টি চেকবই জব্দ করা হয়। জব্দকৃত মোবাইল সমূহের বিকাশ, নগদ, ডাচ বাংলা ও ইসলামী ব্যাংক একাউন্টে রবিবার (১১ জুলাই) পর্যন্ত সর্বমোট ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৮ টাকা লেনদেন হয়েছে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় খেলাধূলাকে কেন্দ্র করে অনলাইন জুয়া যুবক ও তরুণদের মাঝে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া চলমান কোপা আমেরিকা ও ইউরো কাপকে সামনে রেখে কুমিল্লায়ও এই অনলাইন জুয়া ছড়িয়ে পড়েছে। এমনি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল রবিবার ভোর রাতে জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে জুয়া চক্রের সদস্য ওই গ্রামের শরীফ শাহজালাল ওরফে মিরাজ (২৫) ও মিল্লাত হোসেনের বাড়িতে তল্লাশী করে অনলাইন জুয়া পরিচালনায় ব্যবহৃত ৮টি মোবাইল, নগদ ৪৩ হাজার ৮০০ টাকা ও ৩টি চেকবই উদ্ধারসহ মিল্লাত হোসেনকে গ্রেফতার করে।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিল্লাত হোসেনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই চক্রের অপর সদস্য সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া একই গ্রামের কামাল হোসেনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে আরো ৩টি মোবাইল ফোন, নগদ ৯৫ হাজার টাকা ও একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, এই চক্রটি মূলত ‘বাজী লাইভ’ নামে মালয়েশিয়ান ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছে। এই ওয়েবসাইটটি মালয়েশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এর একজন করে এজেন্ট নিয়োগ করা আছে। কুমিল্লার মূল এজেন্ট মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া গ্রামের সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫)। সে শরীফ শাহজালাল ওরফে মিরাজ, কামাল হোসেন ও গ্রেফতার মিল্লাত হোসেনের মাধ্যমে ১৯টি গ্রুপ তৈরি করে এই অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছে।
গ্রেফতার মিল্লাত হোসেন জানিয়েছে- বিকাশ, রকেট, নগদ, ইউক্যাশ- এ ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং এর ডিলাররা প্রতিটি গ্রুপের এজেন্ট হতে পারে। তিনি আরো বলেন, এই জুয়া পরিচালনার মাধ্যমে অর্জিত বিপুল পরিমাণ টাকা চক্রের প্রধান সারোয়ার আহমেদ জুয়েল অবৈধ পন্থায় বাংলাদেশের বাইরে ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে পাচার করে সে নির্ধারিত হারে কমিশন পায় এবং চক্রের অপর সদ্যদেরকেও কমিশন দেয়। এই চক্রটি দরিদ্র তরুণ-যুবকদেরকে কমসময়ে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত করছে। এতে ক্যাসিনো ও জুয়ার মতো সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে যুবসমাজ। এ ব্যাপারে মুরাদনগর থানায় মামলা হয়েছে।