1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
কুমিল্লার বিভিন্ন স্কুলের ক্লাস ছেড়ে সংসার জীবনে ৩০শতাংশ ছাত্রী
বাংলাদেশ । রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লার বিভিন্ন স্কুলের ক্লাস ছেড়ে সংসার জীবনে ৩০শতাংশ ছাত্রী

নেকবর হোসেন :
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৬০৭ বার পড়েছে
কুমিল্লার বিভিন্ন স্কুলের ক্লাস ছেড়ে সংসার জীবনে ৩০শতাংশ ছাত্রী
কুমিল্লার বিভিন্ন স্কুলের ক্লাস ছেড়ে সংসার জীবনে ৩০শতাংশ ছাত্রী

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাসিন্দা নিমি আক্তার।স্থানীয় আসলাম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে।এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে নিমি সবার ছোট।তার বাবা কুমিল্লার কোটবাড়ির একজন ব্যবসায়ী।নিমি ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের এসএসসির পরীক্ষার্থী ছিল।পরীক্ষা দেওয়ার খুব ইচ্ছে থাকলেও গত জুন মাসে করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়।

পড়ালেখা বন্ধ করে কেন বিয়ে দেওয়া হলো,জানাতে চাইলে তার ভাই রাকিব জানান,বোনকে দিয়ে তারা চাকরি করাবে না,তাই বিয়ে দিয়েছেন।এছাড়া অন্য কোনও সমস্যা নেই।সুবরাতি শাহজাদী মোমোরিয়াল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন,নিমি নিশ্চিন্তপুর আসলাম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।ওই স্কুলের পরীক্ষার্থীরা আমাদের বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করেন।

করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় গত জুন মাসে নিমিকে বিয়ে দিয়ে দেয় তার পরিবার।বিয়ের সংবাদ শুনে তার পরিবারের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ ও অনুরোধ করেও বিয়ে ঠেকানো যায়নি।তিনি আরও বলেন,শুধু নিমি নয় তার বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির আরও একাধিক ছাত্রীর করোনাকালে বিয়ে হয়ে গেছে।বিয়ে হয়ে যাওয়া ছাত্রীরা আর স্কুলে ফিরছেন না।

এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর ১০ দিন অতিবাহিত হলেও ৩০ শতাংশ ছাত্রী এখনও ক্লাসে অনুপস্থিত বলে জানান তিনি।এছাড়া গড়ে ৩৫ ভাগ ছাত্রছাত্রী অনুপস্থিত বলে দাবি তার।এদিকে করোনাকালে দীর্ঘ ছুটির পর ফের আনুষ্ঠানিক পাঠদান শুরু হলেও কুমিল্লা জেলার ৬০৫টি সরকারি ও আধা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিমির মতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী আর বিদ্যালয়ে ফেরেনি।

করোনার কারণে শহরাঞ্চলের অনেক পরিবার গ্রামে চলে গেছে।সামর্থ্য না থাকায় সেখানেও কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হতে পারেনি।আবার অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে,ছাত্ররা প্রবাসে কিংবা কর্মজীবনে ঢুকে পড়েছেন।একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,বিদ্যালয় খোলার মাত্র কয়েকদিন হলেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আলামত তারা দেখতে পাচ্ছেন।

অনেক শিক্ষার্থীর অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে না আসা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না রাখা এবং এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ না করা বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছে।কুমিল্লা আদর্শ সদর রাজাপুর ফয়েজুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৬৪ জন ছাত্রীর মধ্যে করোনার বন্ধের পর গত ১০ দিনে গড়ে উপস্থিতি ৫২।বাকি ১২ জন ছাত্রী ক্লাসে অনুপস্থিত।

একই অবস্থা নবম শ্রেণিতেও।নবম শ্রেণির ৫৩ জন ছাত্রীর মধ্যে গড়ে উপস্থিত ৪২ জন।ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত ১১ জন ছাত্রী।উপস্থিত ছাত্রীরাই কেবল ক্লাস অ্যাসাইমেন্ট জমা দিয়েছেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম।তিনি বলেন, করোনার বন্ধের পর স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে গড় উপস্থিতি ৭০ শতাংশ।অনুপস্থিত ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিবার থেকে জানানো হয়,তারা দেশে চলে গেছেন।

সত্য গোপন করলেও আমরা খবর নিয়ে দেখেছি অনুপস্থিত অধিকাংশ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে।অন্যদিকে কুমিল্লা শহরতলীর সুবরাতি শাহজাদী মোমোরিয়াল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ১৮৯ জন।তাদের মধ্যে গত দশ দিনে গড়ে উপস্থিতি ১৩০ থেকে ১৪০।বাকি প্রায় ৪৯ জন শিক্ষার্থী ধারাবাহিক অনুপস্থিত রয়েছেন।তারা অ্যাসাইনমেন্টও জমা দেয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন,স্কুলের প্রতিটি ক্লাসে এখনও গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত।স্কুল থেকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে নবম ও দশম শ্রেণির অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে।সদর দক্ষিণ উপজেলার কমলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ মমিনুল ইসলাম জানান,করোনার দীর্ঘ বন্ধ কাটিয়ে পুনরায় চালুর পর তার বিদ্যালয়ে নবম-দশম শ্রেণির প্রায় ৩৫ ভাগ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত এখনও।

তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রী।তার ধারণা করোনার দীর্ঘ বন্ধের পর ক্লাসে অনুপস্থিত এই শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়েছেন।আবার অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে।তারপরও তারা অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।কুমিল্লা শহরতলীর আরেক স্কুল আলেকজান মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান জানান,তার বিদ্যালয়ের নবম-দশম এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে এখনও অনুপস্থিত।

শিক্ষকদের বিভিন্ন জনের মুখ থেকে শুনছেন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে।তারা আরও স্কুলে ফিরছেন না।তবে এই ধরনের কোনও তালিকা করা হয়নি।এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল মজিদ জানান,কুমিল্লা জেলায় ৬০৫টি সরকারি ও আধা সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

করোনায় দীর্ঘ বন্ধের পর উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে।পরিদর্শনে দেখা গেছে বিদ্যালয়ে গড়ে ৭০-৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছেন।প্রতিদিনই স্ব স্ব বিদ্যালয়কে তাদের প্রত্যেক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি রেকর্ড করে অনলাইনের মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD