সিলেট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৬টি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। দুটি ট্রেন চট্টগ্রাম আর বাকি ৪টি ট্রেন ঢাকা যায়। ৬টি আন্ত:নগর ট্রেনে সব মিলিয়ে সিলেট স্টেশনের জন্য বরাদ্দ করা আসনের সংখ্যার তুলনায় যাত্রীর চাপ থাকে পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি। করোনার জন্য কাউন্টারের পরিবর্তে অনলাইনে টিকিট বিক্রি হচ্ছিল এবং এখনো অনেকটা হচ্ছে। ফলে ডিজিটাল কায়দায় কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করে মুনাফা লুটছে একটি মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিকিট সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কালোবাজারিরা বেশ সক্রিয়। কাউন্টারে টিকিট সংকট থাকার সুয়োগে তাঁরা অনলাইনে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়পত্র (আইডি) ও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করে চড়া দামে সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছেন। তাঁদের দৌরাত্ম্যের কারণে যাত্রীরা জিম্মি। বছরে দু-একবার অভিযান চালিয়ে এক দুজন কালোবাজারিকে আটক করা হলেও অধিকাংশ ব্যক্তিরা থাকছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট রেলস্টেশনের এক সরকারি কর্মচারী জানান, তিনি নিজে অনলাইনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। পরে বাধ্য হয়ে পরিচিত একজনের মাধ্যমে জানতে পেরে রেলস্টেশনের নিকটবর্তী মার্কেটের একটি দোকান থেকে বেশি দামে টিকিট কিনেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে টিকিটের ২০% অনলাইনে দেওয়া হতো। করোনা উত্তর এখন ৫০% টিকিট অনলাইনে দেওয়ায় কালোবাজারিরা আগের চেয়ে আরো তিনগুন সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। তাই অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালোবাজারি চক্র ভিন্ন ভিন্ন আইডি ও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে টিকিট কেটে রাখে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা অনলাইনে কিংবা অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করে বেশির ভাগ সময় ব্যর্থ হন। পরে কালোবাজারে টিকিটি কাটতে বাধ্য হন। এ ছাড়া ট্রেনের যাত্রীদের বড় একটি অংশ অনলাইন সুবিধার বাইরে। ফলে তাঁদেরও বাধ্য হয়ে বেশি দামে কালোবাজারে টিকিট কিনতে হয়। ট্রেনের টিকিট কাটায় ডিজিটাল এই কায়দা কাজে লাগিয়ে মুনাফা লুটে নিচ্ছেন কালোবাজারিরা।
সিলেটে রেলস্টেশনের অপর এক কর্মচারী জানান, টিকেট কালোবাজারির সাথে আগে কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা ছিল, এটা সত্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে টিকিট কালোবাজারী সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন ঘরে ঘরে ৮-১০ টি মোবাইল ফোন এবং ওয়াইফাই নেট। একটি দুয়েল মেবাইলে দুটি সিম থাকে। প্রত্যেকটি সিমের বিপরীতে ৪ টি করে টিকেট কাটা যায়। তাই একজন কালোবাজারী চাইলে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ৪০টি টিকিট কেটে নিতে পারে। এভাবেই কালোবাজারিরা অনলাইনে ৫০ ভাগ টিকেট কেটে নেওয়ার পর স্টেশন কর্তৃপক্ষের ভিআইপি বা রিজার্ভ টিকট বাদে আর থাকে ক’টি। তিনি বলেন রিজার্ভে যে সব ভিআইপ টিকিট থাকে তাও প্রতিদিন সকাল ৯টা বাজতেই অটো অনলাইনে চলে যায়। ফলে ৬০% টিকিট অনলাইনে কালোবাজারিদের হাতে চলে যায়। মোবাইল ও অনলাইনের এ সুযোগে সিলেটে গড়ে উঠেছে জানা-অজানা টিকিট কালোবাজারি অনেক সিন্ডিকেট।
অপর এক কর্মকর্তা জনান, ট্রেন আরামদায়ক,দ্রুত ও নিরাপদ ভ্রমণের বাহন। টিকিটের মূল্য আন্তঃনগর বাসের অর্ধেক হওয়ায় এর চাহিদা অনেক। চাহিদা মতে আসন দিতে না পারায় টিকেট সংকট দেখা দেয় এবং কালোবাজরিরা বেশি দামে টিকিট বিক্রি সুযোগ পেয়ে থাকে। অনুসন্ধ্যানে সিলেটে রেল স্টেশনের কাছে যমুনা মার্কেটে নলাইন মিডিয়া, ওয়ান মিডিয়া, নাইম এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি কলোবাজারি সিন্ডিকেট রয়েছে। এছাড়াও নগরের আনাচে কানাচে গড়ে ওঠেছে টিকিট কালোবাজারির ডিজিটাল সিন্ডিকেট। জিজিটাল টিকিট কালোবাজরির এ সুযোগ করে দেয়া হয়েছে ৫০% টিকিট অনলাইনে দেওয়ার মাধ্যমে। আগের ন্যায় রেল টিকিট অনলাইনে ২০% দেওয়া হলে কালোবাজারি অনেকটা হ্রাস পাবে বলে জানান তিনি।