করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি করোনার মতো উপসর্গ নিয়েই কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ঘরে ঘরে চলছে জ্বরের তাণ্ডব। প্রথমে খুশ-খুশে শুকনো কাশি, সর্দি, জ্বর, জ্বর বেড়ে তাপমাত্রা ১০১ থেকে প্রায় দুই তিন ডিগ্রি তাপমাত্রায় উঠে আসা। সাথে সারা শরীরে ব্যথা, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, বমি এমনই এক ধরনের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে করোনা আতঙ্কে রয়েছে এলাকার মানুষ। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স , প্রাইভেট হাসপাতাল আর গ্রামগঞ্জের ফার্মেসীগুলোতেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আসা অসংখ্য রোগীর উপস্থিতি ।
উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ষাইটশালা গ্রাম থেকে জ্বর নিয়ে আসা ৮ বছর বয়েসী নুসাইবা’র মা শিউলী বেগম বলেন, গত কয়েকদিন যাবত নুসাইবা ঠাণ্ডা-জ্বর ও কাশিতে ভুগছেন, বাসার কাছের ফার্মেসী থেকে ওষুধ খাইয়েছেন কিন্তু কোনো আরোগ্য না হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন উন্নত চিকিৎসার জন্য।
উপজেলার চান্দলা ইউনিয়ন থেকে আসা আঃ লতিফ (৬০) বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তিনি ঠাণ্ডা কাশিতে ভুগছেন, সাথে জ্বর ওঠানামা করে। গ্রাম ডাক্তার থেকে ওষুধ খেয়ে তেমন কোনো উপকার না পেয়ে ছুটে এসেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের কল্পবাস থেকে কাশি ও জ্বর নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৫ মাস বয়সী অভি, অভির মা শিরিন সুলতানা বলেন, গত কিছুদিন থেকে অভি জ্বরে ভুগছেন। প্যারাসিটামল খাওয়ালে জ্বর কমলেও পরে আবার বেড়ে যায়। সাপোজিটরি ব্যবহার করে জ্বর নিয়ন্ত্রণে আনতে হচ্ছে।
এদিকে চিকিৎসকেরা অনেকেই এটাকে সাধারণ ভাইরাস-জ্বর হিসেবে ধরে নিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, এই জ্বর কিছুক্ষণ পর-পর উঠা-নামা করে, প্যাথলজিক্যাল পরিক্ষায় জ্বরের কারণ হিসেবে তেমন কোন কিছু পাওয়া যায় না, যার কারণে জীবাণুটা কী তা ঠিকঠাক ধরা যায় না। তবে জ্বরের উপসর্গ এবং শারীরিক সমস্যা দেখেই চিকিৎসা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের ধারণা এটা এক ধরনের ভাইরাসজনিত জ্বর। ঋতু বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ওই সব ভাইরাস অতি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়।তবে এ ক্ষেত্রেও মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য বলে উল্লেখ করেন চিকিৎসকরা।
নিয়মিত চেম্বার করেন এমন চিকিৎসকরা বলছেন করোনার মধ্যে হঠাৎ এই ধরনের ভাইরাস জ্বরের হানা মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে, অনেক ক্ষেত্রে একটানা কয়েক দিন জ্বর থাকা এবং তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকা ও শরীর দুর্বল হয়ে আসায় অনেকেই সতর্কতা মুলক হাসপাতালমুখী হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত কিছুদিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত করোনার নমুনা পরীক্ষায় অধিকাংশ রোগীই করোনা পজিটিভ আসছে।অতীতের তুলনায় সংক্রমণ হার বেশি বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
এই জ্বর সম্পর্কে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মোঃ মহিউদ্দিন মুবিন পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, করোনা মহামারির পাশাপাশি এটা একটা সিজনালী সাধারণ ভাইরাস জ্বর। তবে জ্বরটাকে মোটেই অবহেলা করা যাবে না। প্যারাসিটামল খাওয়ার পর দু-একদিনের মধ্যে যদি জ্বর না কমে সেক্ষেত্রে অবশ্যই রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যেহেতু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে দেশজুড়ে। জ্বরাক্রান্ত রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি, লেবু, শাক সবজি, ভিটামিন সি জাতীয় ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অবশ্যই ঘরেবাইরে এসব রোগীদের মাস্ক পরার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। শরীরে যেনো কোন ঘাম জমতে না পারে সেদিকেও সতর্ক থাকতে বলেছেন এই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।