করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেড় বছরের অধিক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো।তবে এই সময়ে বন্ধ ছিলো না বাল্য বিয়ে।করোনাকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইলে হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আল মামুন জুয়েল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দারিদ্রতা,সংসারের অভাব অনটন ও পারিবারিক এবং সামাজিক অসচেতনার কারণে অপ্রাপ্ত বয়সে ছাত্রীদের বিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।এছাড়াও এ বিদ্যালয়লের অন্তত ২০ জন ছাত্র দারিদ্রতার কারণে পড়াশোনা বাদ দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে।শুধু চরাঞ্চলের এই হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয় নয়, জেলার ১৬২৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭৮৬ স্কুল,মাদ্রাসা এবং কলেজের চিত্রও একই রকম হবে বলে ধারণা করছে তারা।
তবে বাল্য বিয়ে এবং ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর কোনো তথ্য দিতে পারেননি জেলা প্রাথমিক অফিস ও জেলা শিক্ষা অফিস।স্থানীয় সূত্র জানায়,টাঙ্গাইল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে যমুনার চরাঞ্চলে হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয়।এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসা বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের।এ অঞ্চলে বাল্য বিয়ের প্রবণতা আগে থেকেই বেশি।
বাল্য বিয়ের কারণে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে যায়।তবে করোনাকালে অনেক বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী বিয়ের কারনে ঝড়ে গেছে।স্কুল সূত্র জানায়,এ বিদ্যালয়ে মোট ১ হাজার ৫৫৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।এর মধ্যে ৬৯০ জন ছাত্রী।প্রধান শিক্ষক শামীম আল মামুন জানান,গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার পর অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অনুপস্থিত ছাত্রীদের মধ্যে প্রায় ৬০ জনের বাল্য বিয়ে হয়েছে।প্রায় ৩০ জন ছাত্র দারিদ্রতার কারণে বিভিন্ন জায়গায় কাজ নিয়েছে।তিনি আরো জানান,এলাকায় বাল্য বিয়ের প্রবণতা আগে থেকেই রয়েছে।বিদ্যালয় খোলা থাকলে শিক্ষকরা মিলে ছাত্রীর বিয়ের উদ্যোগ বন্ধ করতেন।অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে না দিতে উদ্বুদ্ধ করতেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন,গত বছর মার্চে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়।দীর্ঘ দিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো না।তাই তাদের বাল্য বিয়ে ঠেকানো যায়নি।বাল্য বিয়ের শিকার কাশিনগর গ্রামের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান,স্কুল বন্ধ থাকায় বাবা মা তাকে বিয়ে দিতে পেরেছেন।ওই শিক্ষার্থীর কৃষক বাবা জানান,তিনি দরিদ্র মানুষ।ভালো পাত্র পেয়েছেন তাই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন খান জানান,সবাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশি ব্যস্ত ছিলো।এই সুযোগে অনেক অসচেতন অভিভাবক তার নাবালক মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন।স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে এতো বেশি সংখ্যক বিয়ে হতো না।স্কুলের শিক্ষকদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরাও বাল্য বিয়ে বন্ধে ভূমিকা রাখতেন।
মানব প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী মাহমুদা শেলী জানান,একটি বিদ্যালয়ের এতো সংখ্যক ছাত্রী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন।তাহলে চরাঞ্চলের অন্যান্য স্কুল গুলোতেও নিশ্চয়ই এই হারে বাল্য বিয়ে হয়েছে।বাল্য বিয়ের শিকার এসব ছাত্রীদের চিহ্নিত করে স্কুলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
এছাড়াও কম বয়সী মেয়েদের যারা বিয়ের রেজিষ্ট্রি করিয়েছেন সেই সব নিকাহ রেজিস্ট্রারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম বলেন,বাল্য বিয়ে ও ঝড়ে পরা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে উপজেলা পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।তথ্য সংগ্রহ শেষে সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যাবে।