1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
উপন্যাস : স্বপ্নীল হাসি
বাংলাদেশ । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
ব্রেকিং নিউজ
ডাঃ তাহসীন বাহার সুচনার বিজয়ে কুমিল্লার লন্ডন প্রবাসীদের ইফতার ও মিষ্টি বিতরন এক মিনিটে ৮টি ক্রিম বিস্কুট খেয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ আবেদন । বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেন সাকিব আল হাসান অবরোধের প্রতিবাদে ইবি ছাত্রলীগের মোটরসাইকেল শোডাউন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন বিএনপি জামায়াতকে অগ্নি সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে নির্বাচনে আসার আহবান-এমপি বাহার হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচনে  সৈয়দপুর পুলিশের সাফল্য, গ্রেফতার ৩ কুলাউড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সুপারের তদারকি জাপার সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ কুমিল্লায় হরতাল-অবরোধে ২২ পিকেটিং-ভাংচুর মামলা গ্রেফতার ১০৪

উপন্যাস : স্বপ্নীল হাসি

উপন্যাসিক : মোঃ নূরুল আলম আবির
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৪০৫ বার পড়েছে
উপন্যাস : স্বপ্নীল হাসি
উপন্যাস স্বপ্নীল হাসি

প্রকাশ: ২১শে বইমেলা, ২০০৯।। (২য় পর্ব)

আমরা বিকেলের আলোয় কদম গাছের নিচে বসেছিলাম। উঠোন থেকে কদমতলে বসা পর্যন্ত ওর হাতটি আমি ধরেই রেখেছি। মাটির কোল ঘেঁষে থাকা কদম গাছের চেপ্টা পাতা বিছিয়ে বসেছি দু’জন।
হাসি ছোটছোট ঘাসফুলের স্যালোয়ার কামিজ পরেছিল। আর তাকে জড়িয়ে ছিল একটি হলুদ ওড়না। মাথা তেল মেখে আছড়িয়ে পেছনে চুলের ফুল তোলা হয়েছে। পায়ে জুতো নেই। নখে মেহেদীর রং নেই। শুধু ডানহাতের তালুতে বড় করে লেখা “মা”। তার দুই গণ্ডদেশে রক্তলাল রং আলতোভাবে ল্যাপ্টানো। এতে তার চেহারাটা ঈষৎ রক্তবর্ণ হয়ে গেল। আলো আর ছায়া ওর সারা শরীরে খেলা করছে। বাতাসের তোড়ে গাছপালার হেলেদুলে নাচানে এমন সুন্দর আবহ সৃষ্টি হয়েছে। শান্ত পুকুরের জলে মাছের ছুটোছুটি আর ঘনবনে পাখিদের গান, রঙচটা বিকেলটাকে আরো সুন্দর ও স্বার্থক করে সাজিয়ে দিল। আমি আর হাসি। এখানে আর কেউ নেই।

অনেকক্ষণ তারে আপন নয়নে দেখলাম। দেখার সাধ যেন মিটছে না। সে ঝিলে ফোটা শাপলার মত চুপচাপ বসে আছে। মাঝে মাঝে ঠোঁট নেড়ে মৃদু হাসি হাসছে।
আমি বললাম, হাসি তুই খুব সুন্দর। অমনি সে ছুটন্ত ঝর্ণার মত হাসি ছড়িয়ে খুশির মিছিল বাঁধিয়ে দিল। হাসিটা ম্লান হতে না হতেই সে প্রশ্ন করে বসল—

আপনি বলেছেন গল্প করবেন। কই করছেন না যে?
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। কারণ যে কথাটি হাসিকে বলব ভেবেছি, তা একদম ভুলে গেছি। ওর সৌন্দর্যের মোহ কাটিয়ে কিছুটা চমকে উঠে বললাম, হাসি তোকে ধন্যবাদ। গল্পটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।
তখন সে চোখ কপালে তুলে বলল, ওমা! উঠান থেকে এখানে আসতেই সব ভুলে গেলেন!
আরে না। তুই কত সুন্দর তা চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম।
আপনি সত্যি বলেননি। আমি মোটেও সুন্দর নয়। মা আমাকে একটুও পছন্দ করে না। ভালোবাসে না। সবসময় বলে অলক্ষ্মীণী, তুই আমাদের ডুবাইবি।
আন্টি মিথ্যে বলেছেন। আসলে তুই একটা লক্ষ্মী মেয়ে। শুনেছি তোর নাকি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে?
এক মুহূর্ত চুপচাপ থেকে একটু রেগে বলল, আমি জানি না।
তুই না জানলে, বিয়ে হয় কিভাবে?
এমনিতেই হচ্ছে। অনেকেই বলে না— “যার বিয়া তার খবর নাই, পাড়া পড়শীর ঘুম নাই”!
আমি কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকলাম। তারপর বললাম, তুই তাহলে কিছুই জানিস না?

বিয়েতে মেয়েদের মতের দরকার আছে নাকি? তাহলে বাবা-মা আমাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতো। বিয়েতে আমার ইচ্ছে আছে কি নেই, জানতে চাইত। কই, কেউ তো আমাকে একটুও মূল্যায়ণ করল না।
এ ব্যাপারে আমাকে জানালি না কেন?
জানালেই বা কি হতো? আমাদের গেরামের কোন মেয়েটারে জিজ্ঞাসা করে বিয়ে দিছে? আপনি দেখানতো? মোল্লা বাড়ীর আমার বান্ধবী রুহী, উত্তরপাড়ার নাদিয়া, সোহেলের বোন শেফালীসহ সবার বিয়েই তো এভাবে হয়েছে। ওরা নিজের মুখে আমাকে সব বলেছে। এর দায় কার? আমরা মেয়েরা এত অসহায় কেন? আমাদের অসম্ভব সুন্দর স্বপ্নগুলো নীরবেই ঝরে যাচ্ছে। আমরা হেরে যাচ্ছি পুরুষ শাসিত সমাজের ভ্রান্ত নিয়মের কাছে। সবাই বলে মেয়েদের নাকি বেশি পড়ালেখা করতে নেই? তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলেই মঙ্গল।

এখন বল, তোর বর দেখতে কেমন?
একদম ভালো না। একটা পেট মোটা দৈত্যের মত লাগে। একটু সুন্দর করে কথাও বলতে পারে না। বয়স কম করে হলেও ৫০/৬০ বছর তো হবেই। যখন আমি তার সামনে যাই, মাথা উঠিয়ে এক পলক দেখতেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার কাছে বড্ড বিরক্তও লেগে উঠল। ইচ্ছা হয়েছিল, ঢিসুম মেরে নাকটা ফাটিয়ে দিই। কিন্তু পারলাম না। আমরা এভাবেই হেরে যাই। আমাদের সুন্দর স্বপ্নগুলোও নীরবে নিঃশেষ হয়ে যায়!
হাসির কথা শুনে আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছিল। মেয়েটির ইচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দের বিন্দু মাত্রও দাম দেয়া হল না। বলেছে, ছেলে নাকি বড় লোক। আবার ৫০ হাজার টাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করতে চায়। নির্লজ্জ বেহায়ার দল কোথাকার।

শ্রাবণের মেঘলা আকাশের মত সে শান্ত হয়ে গেল। বড্ড চুপচাপ একটা থমথমে ভাব বিরাজমান। মনে হচ্ছে, একটু পরই ঝড় আসবে, বৃষ্টি নামবে।
হাসিকে শান্ত্বতার সুরে বললাম, তুই একটুও চিন্তা করিস না লক্ষ্মীটি। এই বিয়ে হবে না। আমি এই বিয়ে হতে দেব না। তোর সুন্দর স্বপ্নগুলো ভেঙেচুরে তছনছ হতে দেব না আমি। ওদের নীল আকাশে উড়তে তাদের পিঠে আমি নীল ডালা লাগিয়ে দেব। ওরা উড়বে সারা আকাশে। আমি তোর স্বপ্ন পূরণে একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর মত সবসময় পাশে আছি, পাশে থাকবো।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই, আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল অসহায় ও নিরপরাধ ফুলের মত মেয়ে হাসি। তার কান্নার শব্দটা একটুও শোনা গেল না। তবু তার নীরব কান্নাই আমার বুক ভাসিয়ে দিল। অঝর ধারায় বইতে লাগলো অশ্রুর বান।

চলবে….

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD