নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেই মৃত্যুপুরী হাসেম ফুড কারখানায় পুড়ে যাওয়া ৪র্থ তলার ফ্লোরে তল্লাশি চালিয়ে দুটি দেহাবশেষ (হাড় ও কঙ্কাল) উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিআইডি পুলিশ।ঘটনার দুই মাস পর এ দুটি দেহাবশেষ উদ্ধার করা হলো।গত ৮ জুলাই ভয়াবহ সেই অগ্নিকান্ডে এই ফ্লোরটি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছিল ৪৯টি দগ্ধ লাশ।
সেই আগুনের ঘটনার পর ৩ শ্রমিক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকাল থেকে কারখানাটিতে ফের তল্লাশি শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও সিআইডি পুলিশ।মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি কারখানার চারতলায় তল্লাশি চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করে।তল্লাশিকালে সিআইডির সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং রূপগঞ্জ থানার পুলিশ উপস্থিত ছিল।
তিন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে মর্মে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয়।হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকান্ডে ৫১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী নিখোঁজ শ্রমিকেরা হলেন ভোলার চর ফ্যাশনের ওমরপুর এলাকার সালাউদ্দিনের ছেলে মোঃ মহিউদ্দিন (২২),দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানার উত্তর রসুলপুর গ্রামের ফয়জুল্লাহর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২০) ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবোর নান্টু মিয়ার মেয়ে লাবণি আক্তার (১৫)।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন জানান,ওই কারখানার তিন শ্রমিক নিখোঁজ থাকার অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুড়ে যাওয়া কারখানার ভবনে তল্লাশি চালানো হয়।সেখানে চারতলার দক্ষিণ ও পূর্ব কোণের তিনটি জায়গা থেকে হাড়ের অংশবিশেষ,দুটি মাথার খুলি ও এক নারীর মাথার চুল উদ্ধার করা হয়।মর্গে থাকা ৪৮ লাশের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষায় ফলাফল অনুযায়ী ৪৫ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনজনের লাশ মর্গে রয়েছে।সেগুলো ডিএনএ শনাক্তের জন্য পরিবারের কাছ থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছে।নমুনা পরীক্ষায় মিল পাওয়া গেলে সেগুলো হস্তান্তর করা হবে।তল্লাশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।নিখোঁজ ওই তিন শ্রমিক ওই কারখানার কর্মরত ছিলেন।স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিসকে সঙ্গে নিয়ে পুরো কারখানার প্রতিটি ফ্লোরে তল্লাশি চালানো হয়।
কারখানাটি আগুনে পোড়া বর্জ্যে ভরা ছিল।সেগুলো সরিয়ে সেখানে তল্লাশি চালিয়ে মাথার খুলি,হাড়ের অংশ,চুল উদ্ধার করে সেগুলো ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।গত ৮ জুলাই হাসেম ফুডসে আগুনে পুড়ে ৪৮ জনসহ মোট ৫১ (লাফিয়ে পড়ে ৩ জন) জনের মৃত্যু হয়।ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৪৮ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনায় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম,তাঁর চার ছেলেসহ আটজনকে আসামী করে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।এ ঘটনায় তদন্ত জেলা প্রশাসন,ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আলাদা আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।ডিএনএ পরীক্ষা শেষে নিহত ব্যক্তিদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে ৪৫ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।তিনজনের লাশ ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত হওয়ার পর হস্তান্তর করবে সিআইডি।