শেরপুর জেলার সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া বানিয়াপাড়া গ্রামের মৃত মমিন মোল্লার ছেলে আইজ উদ্দিন মোল্লা ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর সূর্যদ্দী গ্রামে পাকহানাদারদের গণহত্যায় অন্যান্যদের সাথে নিহত হন।গণহত্যায় শহীদ আইজ উদ্দিনকে স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পর তার বড় ছেলে মোঃ আজিজুর রহমান ও ছোট ছেলে মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান অসাধু উপায়ে ২০১২ সালের ৩ জুলাই তার মরহুম বাবা আইজ উদ্দিন মোল্লার নামে মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র নং ম-১৮৩২৪৯ প্রদর্শন করায় স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ফুঁসে উঠেছে।সেই সাথে এঘটনায় তারা প্রতিবাদ মুখর এবং সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সদর উপজেলার সূর্যদ্দী ও বানিয়া পাড়া গ্রামসহ আশপাশে সরজমিনে গিয়ে এক অনুসন্ধানে গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে,১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা আইজ উদ্দিন মোল্লাসহ ৪২ জন গণহত্যায় শহীদ হয়।এর পরবর্তীতে স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পাড় হওয়ার পর শহীদ আইজ উদ্দিনের বড় ছেলে মোঃ আজিজুর রহমান ও মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান তার বাবা আইজ উদ্দিন মোল্লাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রচার করে আসছে বলে তারা জানান।
এদিকে সূর্যদ্দী দক্ষিণ পাড়া গ্রামের গণহত্যায় অপর শহীদ আঃ জব্বারের স্ত্রী চন্দ্রমালা (১১০) এর কাছ থেকে শহীদ পরিবারের নামে ইস্যুকৃত সনদপত্র কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং ভাতা পাইয়ে দেয়ার নাম করে ওই সনদপত্রটি জাল জালিয়াতী করে বলেও অভিযোগ উঠেছে।বিধবা চন্দ্রমালার অভিযোগ এ পর্যন্ত তার সনদ পত্রটি তারা ফেরত দেয়নি বলে জানান।
সরেজমিনে সদর উপজেলার বারঘড়িয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফজলুল হক,কামারিয়া ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার ও সূর্যদ্দী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মতিন,বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ খালেক,বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মমতাজ উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে জানান।গণহত্যায় শহীদ আইজ উদ্দিন মোল্লাকে নিয়ে দীর্ঘদিনপর তার দুই ছেলে মোঃ আজিজুর রহমান ও মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান তার বাবার নামে জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদর্শন করে যে বির্তক শুরু করেছে এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অসম্মান এবং অপমান জনক।
মুক্তিযোদ্ধারা কখনোই এমন ঘটনা মেনে নিবেনা।আইজ উদ্দিন মোল্লা কখনো ভারত যান নাই মুক্তিযুদ্ধও করেন নাই এবং ভারতীয় তালিকা ও আমাদের দেশের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম নাই তার।এছাড়াও এমন বির্তকের প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে আমাদের গ্রামের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে।সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মোঃ মোখলেসুর রহমান আকন্দ স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্রে ২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম কামারিয়া ইউনিয়নে রয়েছে বলে সে প্রত্যয়ন পত্রে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে সূর্যদ্দী এ আহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে পার্শ্বে স্থাপিত শহীদ স্মৃতি সৌধর নাম ফলকের ফটকের ডানপার্শ্বে গণ্যহত্যায় শহীদদের নাম তালিকায় আইজ উদ্দিন মোল্লার নাম পাওয়া গেছে এবং বামপার্শ্বে কামারিয়া ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাও রয়েছে।অপরদিকে শহীদ আইজ উদ্দিন মোল্লার বড় মেয়ে মোছাঃ আজিরন নেছা (৬৩) বলেন,তার বাবা গণহত্যায় শহীদ হয়েছেন এবং কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নাই।তার ছোট ভাই আজিজুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান সরকারী সুবিধা নিতে দীর্ঘদিন পর তার বাবার নামে মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদ বের করে এমন কর্মকান্ড করছে এবং এতে করে তার বাবার আত্মাকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে বলে তিনি এমনটাই জানান।
এছাড়াও তার ওই দুইভাই তার সহায় সম্পদ আত্মসাৎ করতে আজিরন নেছা সহ সন্তানদের নামে একের পর এক হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।এঘটনায় আজিরন নেছা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।এব্যাপারে শহীদ আইজ উদ্দিন মোল্লার বড় ছেলে আজিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তার বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগ গুলো অসত্য,বানোয়াট এবং ষড়যন্ত্রমূলক বলে জানিয়েছেন।