আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে যে কৃষকের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো সে কৃষকের বাড়িতে এখন পাকা দালান বা সেমি পাকা টিনের ঘর। অভাব দূর হয়ে সমৃদ্ধি এসেছে হাজারো কৃষক পরিবারে। এর পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে পুষ্টিগুণে ভরা সবজি গাজর চাষ। রাজধানী ঢাকার অতি কাছের এ উপজেলার মাটি গাজর চাষের বিশেষ উপযোগী হওয়ায় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেউলী-দশানী গ্রামের কতিপয় কৃষক গাজর চাষ শুরু করেন। অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় প্রায় পুরো উপজেলায় এর চাষ ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ১১’শ হেক্টর জমিতে গাছর চাষ হয়েছে। গত বৃষ্টিতে ৫০ হেক্টর জমির গাজর নষ্ট হয়েছে। বিঘা প্রতি গড় উৎপাদন ২’শ মণের উপরে। এ উপজেলা থেকে বার্ষিক প্রায় ৫ কোটি টাকার গাজর বিক্রি হয় । গাজর চাষ অধ্যুষিত সায়েস্তা ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম সিকদার (৬০) এ প্রতিবেদককে বলেন, ২৫/৩০বছর ধরে গাজর চাষ করি। এবারও ৮ বিঘা জমিতে বুনেছি।
বিঘা প্রতি ৫’শ গ্রাম বীজ যার মুল্য ৯ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে হাল, সার, পরিচর্যা ব্যয় ও কীটনাশক মিলে প্রায় ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। গড়ে বিক্রি ওঠে ৫০/৭০ হাজার টাকা। মাত্র ৩ থেকে ৪ মাসে দ্বিগুনের বেশি লাভ। একই গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান (৪০) অভিযোগ করে বলেন, এক ব্যক্তির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উচ্চ মুল্যে (কেজি ১৮ হাজার টাকা) বীজ কিনতে বাধ্য করা, মৌসুমের শুরুতে সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে বেশি দাম নেয়া এগুলো দেখার কেউ নেই। ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কখনো মাঠে আসেন না। সার ও কীটনাশক বিক্রেতাদের দোকানে বসেই তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন বলেও তিনি জানান। রাজিব মোল্লা (২৮) নামের আরেক তরুণ চাষি বলেন, চলতি বছর ১২ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছি। ফলন হয়ছে ভালো। আগাম বাজারজাত করার জন্য বেপারীরা সাড়ে ৭ লাখ টাকা দাম বলেছে। এ টাকায় বিক্রি করলেও খরচ বাদে আমার দ্বিগুনেরও বেশি লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান সপন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাজরের বাম্পার ফলন হবে। দামও অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেশি। বিগত সময়ে গাজর চাষ এ অঞ্চলের ১০ হাজারেরও বেশি কৃষকের আর্থিক উন্নয়নসহ ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে বলেও তিনি জানান।