কুমিল্লার দেবীদ্বারে মেহেদী হাসান শান্ত (১৬) নামের এক যুবক নিহত ও ছুরিকাঘাতে ৪ জন মারাত্মক আহত হয়েছে। উপজেলার ফতেহাবাদ নুরপুরে ঈদের আগের দিন (শনিবার) এক মাদ্রাসার সভাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে ঘটনাটি ঘটে।
ওই ঘটনায় নিহত শান্তর বাবা জাকির হোসেন সরকার ঘটনার দিন রাতে বাদি হয়ে আল আমিন ও সাদ্দামসহ ২৬ জনকে আসামী করে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার অভিযুক্ত আসামী সাদ্দাম ও মোকলেছকে গ্রেফতার পূর্বক জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
এদিকে গ্রেফতারকৃত আসামী সাদ্দাম ও কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউছার অনিকের মোবাইল ফোন রেকর্ড নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়ায়, এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সাদ্দাম ও অনিক’র ফোন আলাপের মুল কথা ছিলো- আপনি মিটিংটাতে বইসা শুধু ডিক্লার দিবেন, আপনি মুখ দিয়া যেইডা বলবেন, এটা বহাল থাকবে। আর কেউ কথা বললে পিডা হবে। ওইযে কইছেন যে কালকে কুরবানি হবে, এই কুরবানির সিষ্টেম হবে মাদ্রাসার ভিতরে। ফোন আলাপটি ঘটনার দিন কোন এক সময়ের বলে দাবী শান্তর পরিবারের।
ঈদের আগের দিন (শনিবার) বিকালে উপজেলার ‘নূরপুর স্থানীয় এক মাদ্রাসা ও এতিমখানায় একটি সভা ছিল। সভার পূর্বে নূরপুর গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী মোঃ জসীম উদ্দিনের ছেলে সাজিদের সাথে স্থানীয় সাদ্দাম, আল আমিন, সগির ও বায়েজিদের তর্ক হয়। পরে এ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে বলে জানা যায় স্থানীয় ও মামলা সূত্রে।
ওই সময় সংঘর্ষে শান্তসহ ৫জন আহত হয়। ছরিকাঘাতে গুরত্বর আহত শান্তসহ অপর ৪জনকে দ্রুত দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর সন্ধ্যা ৬টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঈদের দিন (রোববার) বিকালে শান্ত’র নামাজে জানাযা হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে হয়ে উঠে প্রতিবাদ মুখর। হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার চান উপস্থিত মুসল্লিরা। ওই সময় হত্যাকান্ডের ইন্দনদাতা দাবী করে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউছার অনিক’কে জানাযাকালে আলোচনায় অংশ নিতে দেননি মুসল্লীরা।
এদিকে শান্ত হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টায় নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত প্রতিপক্ষ, হত্যাকান্ডের মূল আসামীর নাম পরিবর্তণ করে আমেরিকা প্রবাসী নিহতের মামা সাজিদকে প্রধান আসামী করতে বাদী ও পুলিশের উপর চাপ প্রয়োগ এমনকি ২ নং আসামী সাদ্দামকে ক্যান্সারের রোগী বানিয়ে ৪ বছর আগের ছবি দিয়ে মানুষের সিম্পিথি নেয়ার চেষ্টা করছে বলেও মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন।
মামলার বাদী শান্ত’র বাবা জাকির হোসেন সরকার জানান, আমার ছেলের হত্যকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় আবু কাউছার অনিক। গত শুক্রবার মসজিদে প্রকাশ্যে অনিক বলেন গরু কোরবারির সাথে মানুষও কোরবানি করবে। তার একদিন পর আমার ছেলেকে অনিকের অনুসারিরা হত্যা করে। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করেই শান্ত হয়নি, মামলা তুলে নিতে হুমকী ধমকী দিচ্ছে। ঈদের দিন সকালে মামলা তুলে নিতে আমাকে জোড়পূর্বক দেবীদ্বারে ধরে নিয়ে যায় অনিক।
অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউছার অনিক জানান, আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বিত্তিহীন। মামলা তুলতে নয়! মামলা থেকে একজন আসামীর নাম বাদ দিতে গ্রামে ৭-৮ জনের সিদ্ধান্তের কারনে বাদীকে নিয়ে থানায় যাই। কিন্তু তিনি থানায় গিয়ে উল্টে যায়। সুষ্ঠভাবে তদন্তের মাধ্যমে শান্ত হত্যার বিচার হউক আমিও চাই। ফোন আলাপ ভাইরালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাজিদ এসে সাদ্দামকে বলে মিটিংয়ে আসার জন্য আমাকে ফোন দিতে। তখন সাদ্দাম আমার সাথে ফোন দিয়ে কথা বলে। আমরা ফোনে কথা বলা অবস্থায় পাশে থেকে সাজিদ তা ভিডিও করে।
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, নিহত শান্ত’র বাবা বাদী হয়ে ৬ জনের নামীয় এবং আরো অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনকে আসমী করে মামলা দায়ের করে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজহার ভুক্ত আসামী সাদ্দাম ও মোকলেছ’কে গ্রেফতার পূর্বক রোববার কোর্টে প্রেরন করা হয়েছে। মামলার রহস্য উদঘাটনে পুলশের একাধীক টিক কাজ করছে।