স্বাক্ষর জাল করে ৪৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার ঘটনায় শরীয়তপুরের সেই চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।ইউনিয়নটিতে সুবিধাজনক সময়ে আবার তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৮ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব আতিয়ার রহমান এ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।রাত ৯টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান।চিতলিয়া ইউনিয়নে আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে প্রতিটি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে এক জন করে প্রার্থী বাদে ৪৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেন,স্বাক্ষর জাল করে তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তাঁরা।প্রতীক বরাদ্দের দিন প্রতীক নিতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছে।মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রার্থীদের বলেন,এমপি স্যারের সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে,চিতলিয়া ইউনিয়নে কোনো নির্বাচন হবে না,সবাই সিলেক্টেড হবে।এই কথা এমপি মহোদয় বলেছেন।
এই ঘটনার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রার্থীদের কথোপকথনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মাঝে।বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নজরে আসে।২৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি করে পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব (আইন) মো. মাহাবুবার রহমান ও কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবু ইব্রাবীম গত বুধ ও বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরে তদন্ত কাজ শেষ করেন।এসময় চিতলিয়া ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হওয়া ৪৪ জন প্রার্থী, স্থানীয় সাংবাদিক,রিটার্নিং কর্মকর্তা,রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের চার জন কর্মচারী,উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ৫১ ব্যক্তির সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়,চিতলিয়া ইউপিতে ১১ নভেম্বর ভোট হওয়ার কথা ছিল।ওই ইউপিতে ৪৮ প্রার্থী সদস্য পদে এবং ১২ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন।প্রার্থীদের মধ্যে ২৬ অক্টোবর ৩৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৯ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানতে পারেন প্রার্থীরা।
২৭ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দের দিন অন্তত ২২ জন প্রার্থী অভিযোগ করেন,তাঁরা কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।ভোট স্থগিতের বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন,চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বাতিল সংক্রান্ত একটি চিঠি সোমবার রাত ১০টার দিকে পেয়েছি।
চিঠিতে চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।ইউপি নির্বাচন নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন তদন্ত করেছে।ওই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কমিশন নির্বাচন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।সেখানে সুবিধাজনক সময়ে পুনঃতফসিল হবে।নতুন তফসিলে পুনরায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে।