সৈয়দপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পরিবর্তে গোপনে বৈধতা দিতে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের কানুনগো। দালালের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে কৃষি লীজ গ্রহিতা বানিয়ে দিচ্ছেন।
সময়ে অসময়ে উচ্ছেদ আতঙ্ক থেকে রক্ষা পেতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করেও বৈধতা নিতে হিড়িক পড়েছে দখলকৃত জমির আবাসিক ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনকারীদের মাঝে। আর এই সুযোগে সংশ্লিষ্ট চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
জানা যায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে ভূসম্পত্তি কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ইউনুস আলী অবৈধ স্থাপনা মালিকদের কাছে গিয়ে বৈধ কাগজ করে দেয়ার কথা জানিয়ে চুক্তি করে। পরে চুক্তির অর্ধেক টাকা নিয়ে পার্বতীপুরে রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের কানুনগো জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে কৃষি লীজের কাগজ তৈরী করে দেয়।
এভাবে অনেকেরই কৃষিলীজ করে দিয়েছে ইউনুস। সম্প্রতি শহরের সুরকি মহল্লার ভাগাড় এলাকায় এক বাদম বিক্রেতার দুই শতক রেলজমি কৃষিলীজ করার জন্য ২০ হাজার টাকা চুক্তি করে। সে অনুযায়ী অগ্রীম ১০ হাজার টাকা নিয়ে কাজ করে। কিন্তু বাকী ১০ হাজারের সাথে আরও অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা দাবী করে ইউনুস। এতে বাদাম বিক্রেতা টাকা দিতে সম্মত না হওয়ায় তাকে মূল কাগজ না দিয়ে ফটোকপি দিয়েছে সে। ফলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
একই এলাকার অবৈধ স্থাপনা মালিক ডায়মন্ড কনফেশনারীর কারিগর আবিদসহ আরও কয়েকজনকে লীজ করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ইউনুস। আবিদ জানান, বাদাম ওয়ালার কাগজ দেয়া নিয়ে ঝামেলা করায় আমি এখনও টাকা দেইনি। তবে অনেকেই দিয়েছে এবং আরও অনেকে দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।
এব্যপারে দালাল ইউনুস বলেন, বাদাম ওয়ালার সাথে ২৫ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছিল। অথচ সে পরে পাল্টে যায়। তাই তার মূল কাগজ রেখে দিয়েছি। অগ্রীম নেয়া টাকাতো নিয়মানুযায়ী রাজস্ব আদায় করার ক্ষেত্রে জমা করা হয়েছে।কানুনগো স্যারকে টাকা দিতে হবে। না দিলে তিনি যে কাজ করে দিলেন তার কি হবে? আমারওতো একটা খরচ আছে। তাই টাকা পরিশোধ করলে মূল কাগজ দিয়ে দেবো।
কানুনগো মোঃ জিয়াউর রহমানের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, ইউনুস আমাদের কোন স্টাফ নয়। আগে জব করতেন এখন অফিসের বিভিন্ন কাজে আমাদের সহযোগিতা করেন। কৃষি লীজ দেয়ার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, মূলতঃ রেলওয়ের স্বার্থেই নিলামের মাধ্যমে কৃষিলীজ দেয়া হয়।
তিনি বলেন, আবাসিক বা বানিজ্যিক স্থাপনা তৈরী করে দখলকৃত জমিগুলো গোপনে ভূয়া রেকর্ড করে নেয়ার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছিল অনেকে। এদের হাত থেকে জমিগুলো উদ্ধারের লক্ষ্যেই কৃষি লীজ দিয়ে জমিগুলো যে রেলওয়ের তার একটা ডকুমেন্টস প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজস্বও আয় হচ্ছে।
এক্ষেত্রে তিনি অতিরিক্ত অর্থ আদায় বা দালাল নিয়োজিত করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, কৃষিলীজ করে দেয়ার নামে কেউ যদি ব্যাংক ড্রাফটস এর বাইরে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে সেটা তার দায়। এধরণের কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। (ছবি আছে)