টাকা দিলে নিবন্ধন পাচ্ছেন করোনার টিকা নিতে আগ্রহীরা। যারা টাকা দিতে রাজী নন তাদের নিবন্ধনও করা হচ্ছে না। টাকায় টিকার নিবন্ধন মেলার ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের গাজীনগর এলাকায়। গত ৪/৫ দিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার তা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
অথচ যে স্বাস্থ্যকর্মী এটি করেছেন সেটি তাঁর দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে না। শুধুমাত্র বাড়তি টাকা আয়ের জন্যই এমন ঘটনাটি ঘটিয়েছেন ওই এলাকার দায়িত্বরত স্বাস্থ্য সহকারী। তাঁর নাম সুনীল চন্দ্র দেবনাথ। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন গাজিজনগর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসি নুরজাহান বেগম ও পরিবার কল্যাণ সহকারী চন্দনা রানী নাথ।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় গাজীনগর এলাকার রঞ্জন আলী পাটওয়ারী বাড়ির মোঃ মিজান, রাশিদা বেগম, আনোয়ার উল্যা পাটওয়ারী, মেহেরুননেছা ও রমজান আলী পাটওয়ী বাড়ির হামিদ উল্যা পাটওয়ারী, তাছলিমা আক্তার, আফরোজা আক্তারসহ অনেকের সাথে। তাঁরা জানান, কমিউনিটি সেন্টার ও রমজান আলী পাটওয়ারী বাড়ির ইপিআই টিকাকেন্দ্রে বসে করোনার জন্য নিবন্ধন করেন স্বাস্থ্য সহকারী সুনীল চন্দ্র দেবনাথ। তিনি জনপ্রতি ৫০ টাকা করে নিয়ে করোনার টিকার নিবন্ধন করে দেন। যারা টাকা দিতে পারেননি তিনি তাদের এনআইডি কার্ডের নাম্বার লিপিবদ্ধ করেননি। গত ৩ দিন ধরেই তিনি এখানে এ কার্যক্রম করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন গ্রামের লোকজন। কমিউনিটি সেন্টারে বসেও তিনি একই কাজ করেন বলে জানান তারা।
পরিবার কল্যাণ সহকারী চন্দনা রানী নাথ বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টির সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। স্বাস্থ্য সহকারী সুনিল বাবু অনুরোধ করায় ইপিআই কেন্দ্রে নিবন্ধনের জন্য আসা ব্যক্তিদের এনআইডি নাম্বারগুলো খাতায় লিখে দিয়েছি। তিনি নিজ দায়িত্বে ৫০ টাকা করে নিয়েছেন। আমি টাকা ছুঁয়েও দেখিনি।গাজিনগর কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসি) নুরজাহান বেগম বলেন, বিষয়টির সঙ্গে আমি মোটেও জড়িত নই। আমি আমার ক্লিনিকের ভিতরে বসে সেবা দেই। বারান্দায় বসে স্বাস্থ্য সহকারী কি করেছেন তা আমি জানিনা। সহযোগিতার তথ্যটি সঠিক নয়। আমি কারো কাছ থেকে ৫ টাকা নিয়েছি এমন তথ্য কেউ বলতে পারবেন না।
স্বাস্থ্য সহকারী সুনিল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমার ছেলের কম্পিউটার জানা আছে। এটি আমার দায়িত্ব না হলেও আমি নিজ উদ্যোগে করোনার টিকার নিবন্ধনের জন্য এনআইডি নাম্বার খাতায় লিখে ৫০ টাকা করে কম্পিউটারের খরচ নিয়েছি। গত দু’দিনও অর্ধ শতাধিক লোকের নিবন্ধন করে তাদের টিকা কার্ড দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজকে নিবন্ধনের জন্য টাকা দিয়েছেন এমন লোকের সংখ্যা প্রায় ৫০-৫৫ জন হবে। এদের কার্ড ২/৩ দিনের মধ্যে ক্লিনিকে নিয়ে দেওয়া হবে।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডাক্তার বাহারুল আলম বলেন, কোনো স্বাস্থ্যকর্মীর এ ধরণের নিবন্ধনের কোনো সুযোগ নেই। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিয়ন গুলোতে টিকা শুরু হলে দায়িত্ব প্রাপ্তরা শুধুমাত্র নাম, এনআইডি ও মোবাইল নম্বর রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভূক্ত করেই টিকা দিবেন। এক্ষেত্রে কোনো নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। দায়িত্বের বাহিরে গিয়ে নিবন্ধনের নামে টাকা নেওয়ার ঘটনায় খোঁজ-খবর নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাক্তার জাকির হোসেন ও লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুল গাফ্ফার এর বক্তব্য জানা যায়নি। মুঠোফোনে তাঁরা দু’জনই কল ধরেননি। খুঁদে বার্তা দেওয়া হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।