চলমান মহামারি করোনায় দুশ্চিন্তায় আছেন রাজধানীর উপকন্ঠ মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার খামারিরা। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে গবাদি পশু সমৃদ্ধ এ অঞ্চলে ২০ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। মঙ্গলবার ১৩ জুলাই সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় তালিকাভূক্ত ছোট-বড় মিলিয়ে কৃষক ও মওসুমী ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১২‘শ খামারে এসব গরু-ছাগল পালন করা হচ্ছে। চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে হাট-বাজারের চেয়ে খামারে বেচাকেনাকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতা বিক্রেতারা।
জানা গেছে, প্রতিবছর কোরবানীকে সামনে রেখে উপজেলার কৃষক ও খামারিরা গম,খেসারি,মসুরীর ভুসি, খৈল, ধানের কুড়া শুকনো খর ও কাচা ঘাস খাওয়ায়ে গরু ,ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজাকরণ করে থাকেন। এতে পশুগুলো স্বাস্থ্যবান ও সুন্দর হয়। বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায় উপজেলার কৃষক ও খামারিরা গরুগুলোকে মোটাতাজাকরণে কোনো রকম স্টেরোয়েড ব্যবহার করেনা ।
কোরবানীর ঈদে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে গবাদি পশু ঢাকার গাবতলীসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন খামারি, প্রান্তিক কৃষক ও ব্যবসায়ীরা । গেল বছর ভারত থেকে পশু কম আমদানি করায় দেশি গরুর চাহিদা ভাল ছিল ।এ বছর কোরবানীকে সামনে রেখে দেশী গরু ও ছাগল মোটাতাজা করায় শেষ পর্যায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে অনেকটাই শংকিত খামারিরা। তারপরেও ভারতীয় গরু কিংবা প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ভাল দাম পাবেন এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী , সিংগাইর উপজেলায় স্থায়ীভাবে ৪টি ও অস্থায়ীভাবে দু’টি হাটে গবাদি পশু বেচাকেনা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দূর-দুরান্ত থেকেও ক্রেতারা এ উপজেলায় এসে স্থানীয় হাট-বাজার ছাড়াও খামার থেকে গরু ক্রয় করে নিয়ে যান। উপজেলার হাটগুলোর মধ্যে বায়রা ,সিংগাইর, জয়মন্টপ ও সিরাজপুর হাট বড়।এসব হাটে বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা এসে গরু ক্রয় করে গাবতলী পশুর হাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন।এছাড়া স্থানীয় বেপারীরা এলাকার কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ক্রয় করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন্।বর্তমানে এ উপজেলার শতকরা ৮০ ভাগ লোক এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে।খামারি ছাড়াও কৃষকেরা বাড়তি আয়ের জন্য অধিকাংশ বাড়িতেই দু’একটি করে হলেও গরু ছাগল মোটাতাজা করে থাকেন। আকারভেদে কোরবানী ঈদের সময় প্রতিটি দেশী গরু ৭০ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করার আশা করছেন খামারিরা।
উপজেলায় বৃহৎ আকারের কয়েকটি গরুর মধ্যে সিংগাইর পৌর মেয়র আবু নাঈম মোঃ বাশারের সিনবাদ ,সায়েস্তা গ্রামের সামাদ মিয়ার ৩৮ মণ ওজনের কালা মানিক, লক্ষী সোনা ও গোলাইডাঙ্গা গ্রামের রাজীব খানের বড়বাবু সহ বেশ কয়েকটি গরু গণমাধ্যমের প্রচারনায় এসেছে। অন্যদিকে, জামির্ত্তা ইউনিয়নের স্বল্প জাইল্যা গ্রামের হাজী মোঃ সুরুজ মিয়ার বাবু ক্যাটেন ফার্মটি আলোচনায় রয়েছে। ফার্মটিতে মোট ৬১ টি বড় আকারের গরু পালন করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, সিংগাইর উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১২শ গো-খামার রয়েছে। এবার এসব খামারে মোটাতাজা করা হয়েছে ১৫ হাজার গরু।প্রায় ৩ হাজার ছাগল ভেড়াসহ প্রান্তিক কৃষক ও মওসুমী বেপারী পর্যায়ে ১৮ হাজারের অধিক পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।এ উপজেলায় দেশী জাতের গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে ৮০ ভাগ।এ ছাড়া শংকর জাত যেমন- রেড চিটাগাং, ক্যাটেল শাহিয়াল, ফ্রিজিয়ান ও জার্সি মিলিয়ে রয়েছে ২০ ভাগ।উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের মোকলেছুর রহমান সাধু ,শাহজাহান ও মোকসেদ আলীর বাড়িতে দেখা যায় পারিবারিকভাবে বড় আকারের গরু পালন করছেন ।তারা জানান, দীর্ঘ ১১ মাস গরুগুলো লালন-পালন করে পরিপুষ্ট করে তুলেছেন। চলমান করোনা নিয়ে তারা সকলেই গরুর ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে অনেকটাই শংকিত।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহাম্মদ বলেন, আমি যতটুকু জানি এ এলাকায় গবাদিপশুর গুনগত মান ভালো। কৃত্রিম উপায়ে না করে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকরণ করা হয়। এখানাকার চাহিদা মিটিয়ে ১০ হাজার গরু অন্যত্র বিক্রির জন্য উদ্বৃত্ত থাকবে।