দেশের আকাশে মহা দূর্যোগের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। যে কোন মূহুর্তে শ্রীলংকার চেয়েও মহা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে দেশ। সরকারের ভয়াবহ লুটপাটে অর্থনীতি ইতিহাসের সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায়। এই পরিস্থিতি উত্তরণে আন্দোলনের বিকল্প নাই। দূর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে উচ্ছেদ করেই আসন্ন ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। নয়তো চরম খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে।উপরেল্লেখিত কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুর দেড়টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি’র কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন।তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন লুটের রাজ্যে পরিনত হয়েছে। পিকে হালদার একজন নয়, এরকম হাজারো অর্থ লুটেরা সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে দেশের সব সম্পদ লুটে বিদেশে পাচার করছে। যেকারনে দেশে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ মাত্র চার মাস চলার মত নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।ফলে দেশ এক ভয়ংকর অমানিশায় নিমজ্জিত হতে যাচ্ছে। শ্রীলংকার চেয়েও মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। অথচ সরকারের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা শুধু ব্যস্ত নিজেদের আখের গোছানো, লুটপাট নিয়ে। প্রতিটি উন্নয়ন কাজে অস্বাভাবিক বরাদ্দ দিয়ে অর্থ তসরুপ করছে আর সেই তহবিল রক্ষায় জনগণের পকেট কাটছে নিত্যপণ্যসহ সকল সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি করে। এমনকি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ সেবাখাতগুলোর দাম বাড়িয়েছে অসংখবার। যার ঘানি টানতে হচ্ছে প্রতিটি নাগরিককে।অথচ সরকারী দলের লোকজন আজ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ নয় বটগাছে পরিনত হয়েছে। যারা এককালে ছেড়া স্যান্ডেল পড়ে ঘুরতো তারা আজ লুটপাটের সহযোগী হয়ে দামী গাড়িতে চড়ে বেড়াচেছ। এই অর্থ জনগণের।
কিন্তু জনগণ আজ সব ধরণের অধিকার বঞ্চিত।এমনকি নিজের ভোটটাও দিতে পারেনা সাধারণ মানুষ। দিনের ভোট রাতে লুট করে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখে দেশকে চরম নৈরাজ্যে নিমজ্জিত করেছে। ক্ষমতার অহংকারে তারা এতটাই নিচে নেমেছে যে, প্রধানমন্ত্রীও অহরহ বেফাঁস কথা বলছে। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনুস সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেছেন। ন্যুনতম শিষ্টাচারবোধও নেই।মীর্জা ফখরুল বলেন, এমন জনস্বার্থ বিরোধী লুটেরা, খুনি ও হিংসাপ্রবণ সরকার আজ আমাদের বুকে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে। এদের ক্ষমতাচ্যুত করা ছাড়া জনগণের মুক্তি নাই। তাই দেশবাসী জনবান্ধব দেশপ্রেমিক দল বিএনপি’র দিকে চেয়ে আছে। এজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে জন আকাঙ্খা পূরণে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে।তিনি বলেন, সৈয়দপুর বিএনপি’র উর্বর ভূমি। জাতীয়তাবাদী শক্তির ঘাটি। এজন্য এখানে সবধরনের আন্দোলন সংগ্রাম খুবই জোড়ালোভাবে হয়। অতীতের মত আগামীতেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জননেতা তারেক রহমানের নির্দেশে দেশবাসীকে রক্ষায় যে কোন আন্দোলনের ডাক আসলে ডান বাম না দেখে সোজা রাজপথে নামার জন্য সৈয়দপুরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডস্থ দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই কর্মীসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, প্রকৌশলী ইশরাক হেসেন, রংপুর বিভাগীয় বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি’র আহবায়ক অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার।বিশেষ অতিথি ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, প্রবীণদের দোয়া নিয়ে অচিরেই উপস্থিত তরুন প্রজন্মের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে এই স্বৈরাচার সরকারকে সংসদ ভেঙে বিদায় নিতে হবে। দেশের মানুষ আর এই নির্যাতন নিপীড়নকারী সরকারকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে ছাড়বে।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া না হলে আগামী একসপ্তাহের মধ্যে নেত্রীর বাড়ির সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। এবং এই কর্মসূচীই হবে লুটেরাদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত আন্দোলন। যা পতন নিশ্চিত করে জনগণের হাতে তাদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হবে।স্বাগত বক্তব্য রাখেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব শাহীন আখতার শাহীন। সঞ্চালনায় ছিলেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক প্রভাষক শওকত হায়াত শাহ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, রংপুর বিভাগীয় আহ্বায়ক সামসজ্জামান শামু, রংপুর জেলা আহ্ববায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাবু।কর্মীসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, সৈয়দপুর জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এ্যাডভোকেট এস এম ওবায়দুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউল হক জিয়া, সৈয়দপুর পৌর আহ্বায়ক শেখ বাবলু, সদস্য সচিব এরশাদ হোসেন পাপ্পু, কিশোরগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম, নীলফামারী সদর উপজেলা সদস্য সচিব কাজী জুয়েল, সৈয়দপুর ওলামাদল যুগ্ম আহবায়ক কাজী সাইদুল ইসলাম,ছাত্রদল সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাবু, মহিলাদল সভাপতি রওনক আফজাল রিনু, কৃষকদল সদস্য সচিব সাদিদুজ্জামান সরকার দিনারসহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী।অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে সদ্য প্রয়াত রংপুর জেলা স্বেচ্ছা সেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বিপুর স্ত্রী ও মেয়ের হাতে দলের পক্ষ থেকে ৩ লাখ টাকার অর্থ সহায়তার চেক তুলে দেন মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ইতোপূর্বে আকাশপথে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার ফ্লাইটে পৌঁছেন এবং সভা শেষে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে সড়কপথে রওনা করেন। (ছবি আছে)