বছর জুড়েই চলে মেরামতের কাজ।তারপরও মিলছে না প্রতিকার।সড়কে প্রায় মালবাহী ট্রাক গর্তে আটকে ও উল্টে গিয়ে দীর্ঘসময় চলাচল বন্ধ থাকে।ফলে অন্য যানবাহন আর রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে না পেরে শুরু হয় দীর্ঘ সারি।রাস্তার পিচ উঠে সড়কটির অসংখ্য স্থানে ভাঙাচোরা ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে।সেকারনে রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং তুলে ফেলে ইটসোলিং করা হয়েছে।
কিন্তু তারপরও মালবাহী ট্রাক ও ট্রাক্টর প্রায় গর্তে আটকে গিয়ে দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়। দেখে বুঝার উপায় নেই এটি নওগাঁ-বদলগাছী উপজেলার একটি আঞ্চলিক সড়ক।দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এ সড়কটি এখন বেহাল হয়ে পড়েছে।পাকা সড়কের পিচ উঠে অসংখ্য স্থানে ভাঙাচোরা,খানাখন্দ ও ছোট ছোট ডোবার সৃষ্টি হয়েছে।দূর্ঘটনার পাশাপাশি যেখানে যানবাহন আটকে ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ।
জানা গেছে,নওগাঁ-বদলগাছীর এ সড়ক দিয়ে জেলা শহর হতে পত্নীতলা,সাপাহার,পোরশা,ধামইরহাট উপজেলা এবং ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও জয়পুরহাট জেলায় যাওয়া যায়।নওগাঁ বালুডাঙ্গা বাসট্যান্ড থেকে বদলগাছী উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার।এ সড়কটি বদলগাছীর বাসস্ট্যান্ড মোড়,হাসপাতাল মোড়,বদলগাছী খাদ্যগুদাম মোড়,চাংলা,খলসী মোড়,বালুভরা,কীর্ত্তিপুর বাজার ও পাহাড়পুর বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে সড়কটির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে প্রায় ৬-৭ হাজার যানবাহন চলাচল করে।এ সড়কে ছয় চাকার পণ্যবাহী ট্রাকের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা (গাড়ির ওজনসহ) ১৫ টন এবং ১০ চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২২ টন।কিন্তু ৩০ থেকে ৩৫ টন ওজনের পণ্যবাহী যান চলাচল করছে।যার অধিকাংশ ট্রাকই বালুবাহী।নওগাঁ সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্রে জানা যায় সর্বশেষ ২০১৫ সালে সড়কটি সংস্কার ও প্রসস্থকরণ কাজ করা হয়।
আঞ্চলিক এ সড়কটি বালু,ইট ও পণ্যবাহী ভারী ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করায় সড়কটির অধিকাংশ স্থান দেবে গেছে।দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পিচ উঠে ইটের খোয়া বেরিয়ে গেছে।কোথাও কোথাও মাটি বেরিয়ে কর্দমাক্ত ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।সেইসব গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ছোট ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে।এসব গর্তে প্রায় মালবাহী ট্রাক উল্টে পড়ছে।আবার কখন সড়কের মাঝখানে আটকে গিয়ে অন্য যানবাহন চলাচল করতে না পেরে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে।বড় বড় গর্তে ইট সোলিং করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।কিছুদিন পর আবারও ওই স্থানে গর্ত তৈরী হচ্ছে।আবার কোথাও সড়কটির দুই পাশ নিচু হয়ে মাঝখানে উঁচু হয়ে গেছে।প্রায় ঘটছে দূর্ঘটনা।সম্প্রতি নওগাঁ-বদলগাছী সড়কের জিধিরপুর এলাকায় বিকেলে দেখা যায় বদলগাছী গামী ধান বোঝাই একটি ট্রাক সড়কের মাঝে গর্তে চাকা দেবেআটকেযায়।
এসময় পেছন থেকে একটি আটকে যাওয়া ট্রাকটিকে ধাক্কা দিয়ে ওপরে ওঠানোর চেষ্টা করছে।প্রায় ঘন্টাখানেক সময় সেখানে ট্রাকটি আটকে ছিল।এসময় রাস্তার দুই পাশে শতাধিক যাত্রীবাহি বাস,মালবাহী ট্রাক ও ট্রাক্টর আটকে ছিল।এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেখানেই আরেকটি ধান বোঝাই ট্রাক উল্টে অর্ধেক রাস্তায় ও অর্ধেক ফসলি জমির মধ্যে উল্টে পড়ে যায়।
অটোরিকশা চালক ইসলাম বলেন,গর্তগুলোতে ইট সোলিং করা হলেও তেমন কোন কাজে আসে না।একটু বৃষ্টি হলেই গর্তগুলোতে গাড়ির চাকা নষ্ট হয়ে যায়।খানাখন্দের কারণে প্রায়ই অটোরিকশার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়।তখন অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
বদলগাছী উপজেলার জিধিরপুর গ্রামের সামসুল হক বলেন,রাস্তা বেহাল অবস্থা হওয়ায় সড়কে প্রায় মালবাহী ভারী ট্রাকগুলো আটকে যায়।পর পর দুইটি ট্রাক একই জায়গায় আটকে যায়।এসময় অন্য যানবাহন চলাচল করতে না পরে যানজটের সৃষ্টি হয়।গত ২ বছর থেকে দেখে আসছি রাস্তার ভাঙা অংশগুলোতে ইট বিছিয়ে দেয়া হচ্ছে।অথচ রাস্তা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
বাস চালক শরিফুল ইসলাম বলেন,যখন রাস্তা ভাল ছিল তখন নওগাঁ থেকে বদলগাছী যেতে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগতো।রাস্তার এ বেহাল অবস্থার কারণে সেখানে এখন প্রায় ৫০ মিনিটের মতো সময় লাগছে।রাস্তা ভাঙাচুরার কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলার পাশাপাশি গাড়ি প্রচুর ঝাঁকুনি খায়।যে কোন সময় দূর্ঘটনার ঘটার আশঙ্কা থাকে।আবার রাস্তার মাঝে মালবাহী ট্রাক আটকে পড়লে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন,প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ওজন বহন করা হলে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।নওগাঁ-বদলগাছী সড়কটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ভারী পণ্যবাহী ট্রাক।যার অধিকাংশ ট্রাকই বালুবাহী।তিনি বলেন,রাস্তা সংস্কারে প্রায় দুই বছর আগে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই প্রকল্পটি পাশ হবে।এরপর সড়ক সংষ্কারের কাজ করা হবে।এছাড়া বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ভাঙা অংশে যানবাহন চলাচলে অফিসিয়াল ভাবে ইট-খোয়া ফেলা হচ্ছে।