1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ - ২ প্রকল্প: আল্লাহ! কই আইলাম বৃষ্টি হলে রাইত ঘরে থাকতাম পারিনা
বাংলাদেশ । শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ – ২ প্রকল্প: আল্লাহ! কই আইলাম বৃষ্টি হলে রাইত ঘরে থাকতাম পারিনা

হাবিব সারওয়ার আজাদ:
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১
  • ৪৫৯ বার পড়েছে

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ -২ প্রকল্প:

আল্লাহ! কই আইলাম বৃষ্টি আইলে রাইত ঘরে থাকতাম পারিনা, জানালা লাগাইছে উল্টা, ল্যাট্রিনের চাক ভাঙতাছে,ঘরের ফালা তাইক্যা আস্থর খইস্যা পড়াতাছে,কাঠ নরম, লিন্টার ছাড়াই আজব ঘর বানাইছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ভুমিহীন ও গৃহহীন হিসাবে সম্প্রতি নতুন ঘর পাওয়া উপকারভোগী পরিবারের সদস্যরা এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন শুক্রবার পরিদর্শনে আসা সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেটের সামনে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন ঘর প্রাপ্তির পর সারা দেশে এসব প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি অনিয়ম লুপাটের অভিযোগ উঠা সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তাহিরপুরে বড়দল উওর ইউনিয়নের মাণিগাঁও এলাকায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিদর্শনে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপকারভোগী পরিবারের সদস্যরা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও তাদের মনোনিত লোকজন কতৃক নিম্ন মাণের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণে শুরু হতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, লুপাটের বিষয়ে শুক্রবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেন। পরিদর্শন কালে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আল ইমরান রুহুল ইসলাম,তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও নবাগত) মো. রায়হান কবির, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব, সদস্য সদস্যরা সহ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ সহকারি প্রকৌশলী সুব্রত দাস, ঘর নির্মাণ কাজে ও নির্মাণ সামগ্রী ক্রয়কাজে সুবিধাভোগী উপজেলার বড়দল উওর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ,এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন ও উপকারভোগী পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সরজমিনে গিয়ে শুক্রবার প্রকল্প সুত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রকল্প কমিটির সভাপতি হিসাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প- ২ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অধীনে ভুমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যায় সাপেক্ষে উপজেলার বড়দল উওর ইউনিয়নের মাণিগাঁও মাহারাম নদীর অতি নিকট বালু চরের উপর মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে ৭০টি নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়। ইউএনও’র ঘনিষ্ট জন হওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার যোগসাজসে ঘর নির্মাণ কাজ নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় পরিবহন কাজ অলিখিত ভাবে বাগিয়ে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামের কয়লা বালু পাথর ব্যবসায়ী হাজি মোশারফ হোসেন তালুকদার ও বড়দল উওর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন।

প্রকল্পের শুরুতে ঘরের প্রতিটি ভিটে মাটি দিয়ে ভরাটের নামে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বালু চরে থাকা ফাউ খনিজ বালু দিয়ে ভিটে ভরাট করে পুরো বরাদ্দ আত্বসাৎ করা হয়। এরপর প্রতিটি ঘরের ডিজাইন, নির্মাণ ব্যায়, ওয়ার্ক ইষ্টিমিট গোপন করে নিজেদের মনগড়া ভাবে ডিজাইন ঠিক রেখে ইট সিমেন্ট’র পরিমাণ কম দিয়ে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ঘর তৈরীর কাজ। পরবর্তীতে নিম্ন মানের টেউটিন, কদম কাঠ, দরজা জানালায় নিম্নমানের ষ্টিল রড,ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরের বরাদ্দকৃত অর্থের প্রায় অর্ধেক টাকা আত্বসাতের টার্গেট নিয়ে ঘরের নির্মাণ কাজ ঘুটিয়ে আনেন। টয়লেট নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ৩টি করে স্লাব। পরবর্তীতে উপকারভোগীদের এসব ঘর বুঝিয়ে দেবার কয়েক সপ্তাহ পর খোদ উপকারভোগীরাই অভিযোগ তুলেন ঘরের জানালা উল্টো লাগানোর ফলে বৃষ্টির পানি ঘরে ডুকে।

দিনেই হোক আর রাতই হোক বৃষ্টি আসলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘরেই থাকা যায়না। অধিকাংশ ঘরের পিলারের সিমেন্টের হালকা প্রলেপযুক্ত আস্থর খসে পড়ছে,ঘওে দেয়া রঙ বৃষ্টির পানিতে বিলিন হয়ে ধীরে ধীওে প্রতিটি ঘরের আস্থওে ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘরের ইটের গাথুনিতে দেখা দিয়েছে ফাটল, ঘরে দেয়া কাঠের চটি, বর্গা ভিজে শুকিয়ে নরবরে হয়ে গেছে, বৃষ্টির পানিতে কয়েকটি ঘরের পাশের বালু সরে গিয়ে ঝুঁকিতে ফেলেছে পুরো নতুন ঘর। অভিযোগ উঠেছে, ঘর বরাদ্দের জন্য ইউএনও প্রকল্প কমিটির সদস্য সচিব , উপ সহকারি প্রকৌশলী সুব্রত দাসের নাম ভাঙ্গিয়ে জামাল উদ্দিন কারো কারো নিকট হতে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা গোপনে আদায় করেছেন। মুখ খুললে উপকারভোগীদেও দেয়া ঘরের বরাদ্দ বাতিল হতে পারে বলে সংকেত দেয়ায় প্রতারণার শিকার কেউই মুখ খুলতে নারাজ।

তবে শুক্রবার একাধিক উপকারভোগী জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট প্রকল্প পরিদর্শকালে ঘর নির্মাণে ত্রুুটি, অনিয়ম, দুর্নীতি, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরী ও লুপাটের নানা তথ্য প্রকাশ্যে তুলে ধরেন। উপকারভোগী ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ তার ঘরের পেছনে ফাটল দেখাতে গেলে উল্টো প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ সহকারি প্রকৌশলী সুব্রত দাস অভিযোগকারি ওই বৃদ্ধের বিরুদ্ধে তদন্ত করার হুমকি দেন। আরো এক উপকারভোগী তিন স্লাবের টয়লেটের স্লাব ভেঙ্গে পড়ার অভিযোগ করলে পরিদর্শন কাজ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ওই উপ সহকারি প্রকৌশলী গরু (গবাধি পশু) টয়লেটের স্লাব ভেঙ্গে ফেলেছে বলে খোড়া অজুহাত তৈরী করেন। পরিদর্শন কাজে পুরো অনিয়ম দুর্নীতি আড়াল করতে শুক্রবার সরজমিনে থাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. শফিকুল ইসলাম,সদস্য উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবির, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ সহকারি প্রকৌশলী সুব্রত দাস,তাদের সহযোগি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন নানা খোড়া অজুহাত তৈরী করে উপকারভোগীদের নিবৃক্ত করার চেষ্টা করেন। অবশ্য পরিদর্শনকালে জামালের আরেক সহযোগি ঘর নির্মাণ কাজে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হাজি মোশারফ হোসেন তালুকদার অদৃশ্য কারনে উপস্থিত ছিলেন না।

উপকারভোগী রবীন্দ্র রায়( ৬৫)বলেন, আমাকে দেয়া ঘরের পেছনে ফাটল দেখা দিয়েছে, দরজা জানালা ঠিকমত লাগানো যায়না, বৃষ্টি পড়ে রাতে ঘরে ঘুমাতে পারিনা। তিনি আরো বলেন, অভিযোগ কেউ শুনতেই নারাজ, উল্টা ভয় দেখায়। উপকারভোগী মনিরুজ্জামান বলেন, আল্লাহ! কই আইলাম বৃষ্টি আইলে রাইত ঘরে থাকতাম পারিনা, ঘরের জানালা লাগাইছে উল্টা, টিনের লাগানো চটি, বর্গায় লোহা দিছে কম, কদম গাছের চটি , বর্গা ভিজে রোদে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ঘরে পরিমাণ মত ইট সিমেন্ট লাগায়নি, ১৬ কড়াই বালুর সাথে ১ কড়াই সিমেন্ট দিছে ঘর ঠিকব কেমনে খালী কোন রকম ঘর দিছে, কেউ কোন অভিযাগ শুনে না, খালী মুখ বন্ধ রাখতে কয়। অভিযোগ ও ঘর নির্মাণ কাজের প্রসঙ্গে উপজেলার বড়দল উওর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, সারা দিন সবার ঘরে তালা লাগানো থাকে ঘর ঠিক করতাম কিভাবে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের সাথে জামাল উদ্দিন ও হাজি মোশারফের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ত কর্মকর্তা (পিআইও) প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বদলীকৃত ইউএনও তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি পদ্মাসন সিংহ ঘরের নির্মাণ সামগ্রী কেনাকাটা ও ঘর তৈরীর কাজে তাদেরকে সম্পৃক্ত করেছেন মূলত তারা আমাদের সহযোহিতা করেছেন, তারা ঘরের নির্মাণ কাজ সুপারভাইজ করেছেন। তিনি আরো বলেন, কোন উপকারভোগী তো অভিযোগ করেনি শুধু সাংবাদিকরা অভিযোগ করছেন, লেখালেখি হচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অপর সদস্য তাহিরপুর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবির শুরুতে সাংবাদিকদের ভিডিও চিত্র ধারণ কাজে বাধা প্রদান করেন, এমনকি উপকারভোগী অভিযাগকারিদের নানাভাবে মুখ না খুলত পুরো পরিদর্শন কাজে বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করেন। তাহিরপুরে তৎকালীন সময়ে দায়িত্বে থাকা বর্তমানে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও পদ্মাসন সিংহর সাথে মুঠোফোনে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আল ইমরান রুহুল ইসলাম বললেন, উপকারভোগীদের কিছু কিছু অভিযোগ রয়েছে, পরিদর্শনে কোন অনিয়ম পাইনি, ডিজাইন অনুযায়ী ঘর তৈরী করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD