যে ব্যক্তি জীবনেও খামার করা দূরে থাক একটি পশুও পালন করেননি তাকে খামারী দেখিয়ে প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মচারী।এমনকি এক্ষেত্রে নিজের বাবা মা ভাই বোন,প্রতিবেশী,হোটেল কর্মচারীকেও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।এমন দূর্নীতির ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রাণিসম্পদ অফিসে।
ওই অফিসের অধীনে প্রাণি সম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প এর আওতায় উপজেলার প্রায় সহস্রাধিক খামারীকে প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।এই প্রকল্পে উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী (এলএসপি) মোঃ হাবিব চৌধুরী।তিনি তার কর্ম এলাকার খামারীদের উক্ত প্রণোদনা দেয়ার জন্য তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে নুন্যতম ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা অগ্রীম নিয়ে ভুয়া খামারীদের রেজিষ্ট্রেশন করিয়েছে।
এমনকি তার বাড়ি সৈয়দপুর পৌরসভার নয়াটোলা এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানের ভুয়া ব্যক্তিদের খামারী সাজিয়ে প্রণোদনার সম্পূর্ণ টাকাই হাতিয়ে নিয়েছেন।পৌরসভা এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলএসপি মোস্তাকিনা বেগম নতুন হওয়ায় তাকে সহযোগিতার নামে প্রতারণা করে সে এ দূর্নীতি করেছেন।
এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের কয়ানিজপাড়া ইসলামী কমপ্লেক্সের সামনে বসবাসকারী রিক্সা চালক আবু সালেহর স্ত্রী মানুষের বাড়িতে ঝি এর কাজ করা মোছাঃ অজিফা বেগম (৫০) এর কাছ থেকে।তিনি জানান, হাবিব চৌধুরীর সাথে রাস্তায় দেখা হইলে সে আমাকে বলে চাচী আপনার বাড়ি কোথায়।
এসময় কয়ানিজপাড়ার কথা জানালে সে আমাকে একটা কাজ করে দেয়ার মাধ্যমে প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে টাকা পাইয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয় এবং আমার সম্মতি পেয়ে তাৎক্ষনিক তাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে বলে।সে অনুযায়ী বাড়ি গিয়ে আমার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়ে আমাকে নিয়ে গিয়ে একটা মোবাইল সিম তুলে সে নেয়।
পরে বাড়ির পাশেই খোলা জায়গায় থাকা একটি গরুর পাশে দাঁড় করে আমার ছবি নেয়।কথা হয় প্রণোদনার যে টাকা পাওয়া যাবে তা অর্ধেক আমাকে দিবে।কিন্তু আজ ৩ মাস চলে গেলেও তার আর কোন খোঁজ নেই।একইভাবে শহরের রসূলপুর এলাকার মৃত আজিজুলের ছেলে হোটেল কর্মচারী জাহাঙ্গীর (৪০) ও তার স্ত্রী রহিমাকে প্রণোদনার অর্ধেক টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয় হাবিব চৌধুরী।
সে কথা অনুযায়ী রহিমার নামে ০১৯৩৩৯৮১৩০৭ ও জাহাঙ্গীরের নামে ০১৭৫২৮৯৬৬০১ নম্বরের মোবাইল সিম নেয় এবং এলাকার একটি গরুর পাশে দাঁড় করিয়ে ছবিও নেয়।এরপর থেকে হাবিব চৌধুরী আর দেখা করেনি।এমনও অভিযোগ রয়েছে যে হাবিব চৌধুরী তার পরিবারের লোকজনকেও খামারী হিসেবে দেখিয়ে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন।এছাড়াও নানাজনকে একই কথা বলে প্রতারিত করেছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে হাবিব চৌধুরীর সাথে কথা বলতে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে পর পর কয়েকদিন গিয়েও পাওয়া যায়নি।তার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা যায়নি।প্রকল্পে পৌর এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলএসপি মোস্তাকিনা মুঠোফোনে জানান,আমি নতুন।তাই আমাকে হাবিব চৌধুরী সহযোগিতা করেছেন ৪ নং ওয়ার্ড এলাকায়।
এর বাইরে যদি কেউ কোন ধরণের অনিয়ম করে থাকে তার দায় দায়িত্ব তারই।আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা।পরে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের প্রাণি সম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ডাঃ তাসমিয়া রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান,এ ধরণের কোন অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।তিনি এসময় প্রনোদনার জন্য চুড়ান্ত ও প্রনোদনাপ্রাপ্ত খামারীদের তালিকা দিতেও রাজি হননি।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদুল হক এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন,হাবিব চৌধুরীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি অবগত আছেন।ইতোপূর্বে শহরের চিনি মসজিদ এলাকাসহ খাতামধুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন খামারীর কাছ থেকে প্রানি সম্পদ অফিসের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেয়ার নামে টাকা নেয়ার সত্যতা পেয়েছেন এবং ভুক্তভোগীদেরকে তাদের টাকা ফিরিয়েও দিয়েছেন হাবিব চৌধুরীকে দিয়ে।
কিন্তু অভিযোগকারীরা লিখিতভাবে অভিযোগ না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে জানান তিনি।অভিযোগ রয়েছে প্রানিসম্পদ অফিসের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই হাবিব চৌধুরী এধরণের কাজ করে চলেছে।যে কারণে কর্তৃপক্ষ এমন অনিয়মের সত্যতা পেয়েও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।ফলে সৈয়দপুর উপজেলার খামারীরা প্রতিনিয়ত প্রানি সম্পদ অফিসের বিভিন্ন কাজে কর্মচারীদের দ্বারা হয়রানীর শিকার হয়েছেন।