1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
নায়ক রিয়াজের শশুর লাইভে আত্মহত্যা
বাংলাদেশ । শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নায়ক রিয়াজের শশুর লাইভে আত্মহত্যা

জাফর ইকবাল:
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
  • ১১৪৪ বার পড়েছে
নায়ক রিয়াজের শশুর আত্মহত্যা
নায়ক রিয়াজের শশুর আত্মহত্যা

রিয়াজের শশুরের নাম মোঃ মহসিন ছেলে নিশান এবং স্ত্রী বিউটি হতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। সে লক্ষ্যে তাদের জন্য সেখানে বাড়িও কিনে দিয়েছেন। সেখানেই থাকেন স্ত্রী-সন্তান। অন্যদিকে নিজের অসুস্থতা এবং ইমিগ্রেশন-ভিসা জটিলতায় কারণে গত ৪ বছর ধরে দেশেই অবস্থান করছিলেন আবু মহসিন খান (৫৮)। তিনি মডেল মুশফিকা খানম তিনার বাবা ও চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর। এই ৪ বছরে একবারও দেশে আসেননি স্ত্রী বিউটি ও ছেলে নিশান। তাদের আশঙ্কা ছিল, দেশে এলে কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেতে না পারলে তারা সেই দেশের নাগরিক হতে পারবেন না।

এ কারণে করোনা পরিস্থিতিতেও রাজধানীর ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে সম্পূর্ণ একা থাকতে হয়েছে মহসিনকে। ব্যবসার লোকসান ও কাছের লোকদের কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে মহসিন বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। এদিকে শ্বশুরের আত্মহত্যার ঘটনায় চিত্রনায়ক রিয়াজ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার ধানমন্ডি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। আর যাদের হাতে প্রতারিত হয়ে কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করে গেছেন মহসিন নিজেই। ওই তালিকাটি এখন পুলিশের হাতে। তালিকা অনুযায়ী প্রতারকদের খুঁজছে পুলিশ। পুলিশ, মহসিনের স্বজন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন মহসিন। বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি চালিয়ে নিজ ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেন তিনি। প্রস্তুতি নিয়েই আত্মহত্যা করেন তিনি। ফেসবুক লাইভে বিস্তারিত বলেছেন। চিরকুটে সবকিছু লিখে গেছেন। লাইভে বলেছেন, আমার এক বন্ধু ছিল, নাম কামরুজ্জামান বাবলু। যাকে আমি না খেয়ে তাকে খাইয়েছি।

সে আমার ২৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে। এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা পাই। শেষ যেই মানুষটাকে বিশ্বাস করেছি, তার নাম হলো নোবেল সাহেব। মিনারেল ওয়াটার ফ্যাক্টরি করার জন্য তাকে মেশিন আনার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তাকে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা অ্যাডভান্স করেছিলাম, কিন্তু আড়াই বছর হয়ে গেছে। ঝগড়াঝাটি করার পর দুদফায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দেয়। এখন পর্যন্ত বাকি টাকা ফেরত দিচ্ছে না।

মামলার এজাহারে রিয়াজ বলেন, আমার শ্বশুরের গার্মেন্টস ব্যবসা ছিল। করোনা মহামারির কারণে তার ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। তার ব্যবসাকেন্দ্রিক অনেক টাকা-পয়সা লেনদেন আছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি একাই ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে থাকতেন। আমি স্ত্রীকে নিয়ে বনানীতে থাকি। আমার শাশুড়ি এবং শ্যালক অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।

আমার শাশুড়ি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর থেকে আমি এবং আমার স্ত্রী মাঝেমধ্যেই তার (শ্বশুরের) খোঁজখবর নিতাম। তাকে আমাদের বাসায় থাকতে বলি। কিন্তু তিনি রাজি না থাকায় সেখানে নিতে পারিনি।

রিয়াজ বলেন, আমার শ্বশুর ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার একটি কিডনিও ফেলে দেওয়া হয়েছে। কলাবাগান থানা এলাকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। তিনি তার ব্যবসায় লোকসানের কথা আমাদের জানাতেন। অনেকের কাছে টাকা-পয়সা পাবেন বলেও জানিয়েছেন।

পাওনা টাকা আদায় করতে না পারা এবং করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। গত ১০-১২ দিন ধরে তার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তার এ অবস্থা দেখে আমি ও আমার স্ত্রী তাকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরামর্শ দিই। কিন্তু তিনি সেখানে যেতেও রাজি হচ্ছিলেন না।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহসিনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আবু মহসিন খানের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস। পরে পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়।

লাশ গ্রহণ করেন রিয়াজ। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। বাবার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন উনাকে বেহেশত নসিব করেন। এর বেশিকিছু আমি বলতে পারছি না।

দুপুর ১টার দিকে লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে লাশ নিয়ে রওয়ানা দেন মহসিনের স্বজনেরা। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রিয়াজ বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) বাদ আসর ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডে তার জানাজা শেষে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ কবরস্থানে তার লাশ দাফন সম্পন্ন করা হবে।

মৃত্যুর আগে তার দাফনের ব্যাপারে তিনি যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন সে অনুযায়ী তার দাফন হবে (পরে সে অনুযায়ীই দাফন হয়)। এর আগে ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক এসআই একরামুল হক একরাম ময়নাতদন্তের জন্য সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মহসিনের বাসায় গেলে তার ছোট ভাই আবু হাসান মো. ওয়াহিদুজ্জামান লিপু বলেন, আমি এ বাসায় থাকি না। এ ভবনে একজন পুলিশ কর্মকর্তা থাকেন। তিনি আমাকে রাত ৮টা ৫৬ মিনিটে কল করে দ্রুত মহসিন সাহেবের বাসায় যাওয়ার জন্য বলেন। তখন আমি গিয়ে দেখি আমাদের একজন সিকিউরিটি গার্ড ও একজন ইলেকট্রিশিয়ান ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

আমি ভেতরে যেতে চাইলে ইলেকট্রিশিয়ান বলেন, আরও কেউ আসুক। তখন আমরা পাশের ফ্লাটের ডাক্তার বায়েজিদ সাহেবের স্ত্রীকে ডেকে আনি। মহসিন সাহেবের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা ছিল। ভেতরে গিয়ে দেখা গেল রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি চেয়ারে শুয়ে আছেন। তার মোবাইল টেবিলের ওপর পড়ে আছে এবং একটি পিস্তল ফ্লোরে পড়ে ছিল।

লিপু বলেন, মহসিন ভাই মানুষজনের কাছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা পাবেন। কার কাছে পান সেটার ডিটেইলস তো আর উনি বলেননি। তবে তিনি একটি তালিকা করে রেখেছিলেন। ওই তালিকা পুলিশ নিয়ে গেছে। তাই সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি না যে, তিনি কার কাছে কত টাকা প্রতারিত হয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একাকিত্ব উনাকে খেয়ে ফেলেছে। মানুষ একা বাঁচতে পারে না।

একটা মানুষ ৩ থেকে ৪ বছর একটা ফ্ল্যাটে একা থাকেন। তার ওয়াইফ, ছেলে দেশের বাইরে। লকডাউন ছিল, করোনা ছিল। উনিও ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। উনার অপারেশনও হয়েছে। উনি এখন সুস্থ। তিনি অস্ট্রেলিয়া যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন জটিলতায় যেতে পারেননি।

আমাদের সঙ্গে ৮ বছরের একটা গ্যাপ হয়ে গিয়েছিল তার। এ কারণে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না। মাঝেমধ্যে কথা হতো। কিন্তু সবকিছু শেয়ার করার মতো অবস্থা ছিল না। গ্যাপ হয়ে গেলে শেয়ার করার অবস্থাটা থাকে না। উনার ক্লোজ ছিল উনার মেয়ে, উনার ছেলে। মেয়ের হাজবেন্ড কতটা ক্লোজ ছিল আমি জানি না। মেয়ের হ্যাজবেন্ডের সঙ্গে তো আর এতকিছু শেয়ার করা যায় না।

আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে যেভাবে সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন অন্যদের সঙ্গে পারবেন না। আমি যতই উনার ভাই হই, যা হই। উনার বাবাও আছেন। উনার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করা, হার্ট অ্যাটাক করা রোগী। উনাকে (মহসিনের বাবা) ঘটনা জানানোর আগে উনার প্রেশার, সুগার লেভেল মেপে জানাতে হয়েছে। উনাকে জানানোটাই অনেক কষ্ট হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে লিপু বলেন, মহসিন ভাইয়ের সঙ্গে গতকাল (বুধবার) দুপুরে আমার কথা হয়েছে। বলেছে, ‘একটা জানাজায় এসেছি। তুমি একটু আসতে পারবা?’ আমি বললাম, আমি একটু দূরে। আসতে টাইম লাগবে। হুট করে জানাইছে, আমি প্রস্তুত ছিলাম না। জানাজায় যাওয়ারও একটু প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। সন্ধ্যায় আমি শুনলাম উনি লাইভে এসেছেন। মানুষ আমাকে বলছে, তোমার ভাই যে লাইভে আছে তুমি জানো? কি জানব? কি বলেন? আমি তো হতভম্ব হয়ে গেছি। আমরা তিন ভাই। উনি, আমি আর আরেকজন আছে।

লিপু বলেন, মহসিন দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থেকেছেন। টানা ৩ বছর থাকার পর ১০-১২ দিনের জন্য দেশে আসতেন। কিন্তু গত ৪ বছর ধরে তিনি দেশেই একা অবস্থান করছিলেন।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উনার যে ক্যানসারের সিম্পটম পাওয়া গেছে, সেটা যদি আবার রিটার্ন করে তাহলে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে সব খরচ বহন করতে হবে। তাই অস্ট্রেলিয়া সরকার এ রিস্ক নেবে না। এ কারণে তিনি অস্ট্রেলিয়া যেতে পারছিলেন না। তিনি আরও বলেন, মহসিন স্বাধীনচেতা মানুষ। তাই তার বাসাতেই থাকতেন। বলা হয়েছিল অন্য কারও সঙ্গে থাকতে।

আমরা দূর থেকে যতটুকু সম্ভব সাপোর্ট দিয়েছি। খাবার-দাবার রান্না করে দিয়ে যাওয়া, এতটুকু আমরা করতে পেরেছি। এ ফ্ল্যাটটা উনার নিজের। এটা ছাড়া উনি অন্য কোথাও থাকতেই চাইতেন না। উনার মোহাম্মদপুরেও ফ্ল্যাট আছে, কলাবাগানেও আছে।

লিপু বলেন, গার্মেন্টস আমাদের জন্মগত ব্যবসা। বাবা ৮২ সাল থেকে টেক্সটাইলের মালিক। উনি একজন শিল্পপতি। দুইটা কাপড়ের ফ্যাক্টরির মালিক। ওইখান থেকে আমার ভাই ব্যবসাটা শিখেছে। পরে উনি আলাদা ব্যবসা শুরু করছে। ভাই ও বাবার সঙ্গে ৮ বছর ধরে যোগাযোগ নেই। ৮ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি করেন।

মহসিন খানের ওই বাড়ির ম্যানেজার আব্দুর রহিম বলেন, মহসিন খান ওই বাসায় একা থাকতেন। তার বাসায় কোনো কাজের বুয়া বা ড্রাইভার ছিল না। নিজেই রান্নাবান্না করতেন, একাই থাকতেন। আবার অনেক সময় বাইরে থেকে খাবার আনাতেন। তার একটা প্রাইভেটকার আছে। সেটা তিনি নিজেই ড্রাইভ করতেন।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অপাতত অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। সে অনুযায়ী তদন্ত চলছে। পরিবারের কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। যাদের মাধ্যমে মহসিন প্রতারিত হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহসিনের স্বজনরা যদি অভিযোগ করেন তাহলে এটা তদন্ত করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD