শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে নিজ এলাকা ছেড়ে বহুপথ পাড়ি দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে আগত পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখরিত সৈয়দপুরের সুখীপাড়া বিল। পরিত্যক্ত ইটভাটার জমিতে শীত মৌসুমেও পানি জমে থাকায় নিজেদের আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে শীত প্রধান বিভিন্ন দেশ ও এলাকা থেকে আসা নানা জাতের পাখি। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামান্য উত্তরে সৈয়দপুর-দিনাজপুর বাইপাস সড়কের পাশে ধলাগাছ এলাকার এই বিলে প্রতিদিন এসব পাখি দেখতে ভিড় করছেন অসংখ্য পাখিপ্রেমী। সারাদিনই বিলের পাড়ে আগমন ঘটছে তাদের। বিশেষ করে বিকেল বেলা ও ছুটির দিনে বেশ সমাবেশ দেখা যায়। পথচারী মোটর সাইকেল, ইজিবাইক, অটোভ্যান আরোহীসহ মাইক্রোবাস ও দূরপাল্লার চালক-যাত্রীরাও বাহন থামিয়ে উপভোগ করছেন পাখিদের জলকেলি ও সমবেত কিচিরমিচির।
শুক্রবার বিকেলে মাঘের শীতের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া উপেক্ষা করেও মানুষের সমারোহ দেখা যায় সরেজমিন সুখীপাড়া বিলে গেলে। যেন পরিযায়ী পাখি ও পাখিপ্রেমী মানুষের মিলন মেলা বসেছে সেখানে। বিলটিতে গিজগিজ করছে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা পরিযায়ী পাখি। এর মধ্যে রয়েছে কালিম, ডাহুক, ছোট সরালি, বালিহাঁস, কসাই পাখি, সাদা বক, কাদাখোঁচা জাতের পাখি। ওই এলাকার আসাদুজ্জামান সোহান বলেন, গত প্রায় তিন বছর ধরে আমাদের এই বিলটিতে পরিযায়ী পাখির আগমন দেখা যাচ্ছে। জলাশয়টি ব্যক্তিমালিকানাধীন। এই পাখিগুলো থাকাকালে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন জলাশয়ের মালিক। সেখানে মাছ চাষ বা চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। তবুও জমির মালিকসহ এলাকাবাসী পাখিগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট।
পাখি দেখতে আসা শহরের বাঁশবাড়ী মদীনা লেন এলাকার শাহজালাল বলেন, বাইপাস সড়ক হওয়ার আগে বাঁশবাড়ীর বিলে অনেক পরিযায়ী পাখি আসতো। সেখানে সড়কের দু’পাশে একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ সবজি আড়ত ও পৌর মার্কেট গড়ে ওঠায় পাখিদের আর দেখা যায়না। এর আগে পরিবার-পরিজন নিয়ে পাখি দেখতে নীলসাগর ও রামসাগর যেতে হতো। এখন আবার নিজ শহরেই পরিযায়ী পাখি দেখতে পাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। পাখি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন সেতুবন্ধন যুব উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, বিলগুলোতে পরিযায়ী পাখির আগমন খুবই ইতিবাচক লক্ষণ। তাই এদের সংরক্ষণে আমরা নানা সচেতনতামূলক কাজ হাতে নিয়েছি। যাতে পাখি শিকার না করা হয় এজন্য মানুষের মধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে। বিল এলাকায় বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।
সৈয়দপুরের সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিকুল ইসলাম বলেন, জলাশয়টি পরিদর্শন করেছি। প্রচুর বিদেশি পাখি এসেছে এখানে। জলাশয়টিতে পাখিদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের জোগান রয়েছে। এখন প্রয়োজন সুষ্ঠু তদারকি। তাহলে পাখিগুলোর শীতকালীন পরিভ্রমণ নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে এবং যথাসময়ে ফিরে যেতে পারবে। সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, ‘গন্তব্য বদলে শীতের পাখিরা সৈয়দপুরে আসছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তাই লক্ষ রাখতে হবে কেউ যেন এসব পাখি শিকার না করে। পাখি সংরক্ষণে উপজেলা পরিষদ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথা জানান তিনি।