জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দার একটি বিশেষ দল কুমিল্লা শহরের দুটি মার্কেটসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে। ওই অভিযানে করা জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেনি। তারা ভ্যাটও দেয় না। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন থাকলেও তারা সঠিক তথ্য না দিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) এই অভিযান চালানো হয়। ওইদিন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে অবস্থিত মূল ‘মাতৃভান্ডারে’ অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দার দলটি। প্রতিষ্ঠানে মিষ্টি বিক্রির সময় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অথচ মাতৃভান্ডারটি দৈনিক গড়ে মাত্র ২০-২২টি চালান কাটে।
ভ্যাট গোয়েন্দা দলের দুজন কর্মকর্তা বিক্রয় পর্যবেক্ষণের জন্য ওইদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মাতৃভান্ডারে অবস্থান করেন। ওই একদিনে ভ্যাট গোয়েন্দার উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটি মোট ৩১৮টি ভ্যাট কাটতে বাধ্য হয়, যেখানে বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় দুই লাখ ৯৬ হাজার ৫০ টাকা। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বিক্রয়ের সময় ভ্যাট চালান না দিয়ে মিষ্টির এই দোকানটি ব্যাপকভাবে ভ্যাট ফাঁকি দেয়।
মাতৃভান্ডার থেকে জব্দ করা কাগজে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র ৩৫৪টি ভ্যাট চালান কাটা হয়। এর বিপরীতে বিক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা। অথচ ভ্যাট গোয়েন্দার একদিনের পর্যবেক্ষণে ৩১৮টি চালানে প্রায় তিন লাখ টাকার বিক্রির হিসাব পাওয়া গেছে।
এছাড়া ভ্যাট গোয়েন্দার দলটি কুমিল্লার বনফুল অ্যান্ড কোং এবং কিষোয়ান স্নাকসের কুমিল্লা শাখায় অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠান দুটোতে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় মূসক সংক্রান্ত তথ্যাদি জব্দ করে ভ্যাট গোয়েন্দা দল। এসব দলিলাদি যাচাই-বাছাই শেষে শিগগির ভ্যাট আইনে মামলা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্য মতে, কুমিল্লা শহরের অনেক মার্কেট রয়েছে যেগুলোর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এখনো নিবন্ধন গ্রহণ করেনি।
জরিপে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যেমন- দোকানের মাসিক ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, মাসিক বিদ্যুৎ বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত টার্নওভারের বিবেচনায় নিবন্ধনযোগ্য হলেও এসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি। ফলে ক্রেতারা ভ্যাট পরিশোধ করলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না। এই জরিপের প্রধান উদ্দেশ্য এনবিআরের কাছে মাঠ পর্যায়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা। একইসঙ্গে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা।