1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
দৈনিক কালজয়ী
বাংলাদেশ । শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

উপন্যাস: স্বপ্নীল হাসি

নুরুল আলম আবির:
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৪৬২ বার পড়েছে
বললাম হাসি, বিদ্যুৎ চলে গেছে। ভালোই হলো, আপনার সাথে গল্প করা যাবে।

বললাম হাসি, বিদ্যুৎ চলে গেছে।
ভালোই হলো, আপনার সাথে গল্প করা যাবে।
আমার সাথে গল্প করতে তুই এত ব্যাকুল কেন হাসি?
ব্যাকুল হব না মানে? আপনার মত মজার মানুষ আমি আর একটাও দেখি না।
তাই? আমার প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ।
আমার কথা শুনে সে হেসে উঠল প্রাণখোলে। এমন চমৎকার হাসির শব্দ শুনলেও অন্ধকারে আমি তার হাসি দেখতে পারলাম না। একটি চমৎকার সুন্দর হাসি দেখার সুযোগ নষ্ট হয়ে গেল।
হাসি এখন আমি চলি।
একথা শুনে সে আমাকে অন্ধকারে জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল, এত তাড়াতাড়ি আপনি যেতে পারবেন না। আমি আপনার সাথে গল্প করব।
ঠিক আছে আমি যাচ্ছি না। চল তাহলে বাইরে। কি সুন্দর চাঁদের আলো। ঘনবনে জোনাকীরা দলবেঁধে আলো জ্বালাচ্ছে। চাঁদের সাথে তারাদের সুখের কানাকানি চলছে চুপিচুপ। চাঁদের আলোতে বসে গল্প করতে খুব ভালো লাগবে।
দু’জন বাড়ির উঠোনে নেমে এলাম। হাসিদের উঠোনের পূর্ব পাশে একটি ফুলের বাগান রয়েছে। হাসি তার কচিকোমল হাতে বড্ড যত্ন করে, সে বাগানে একটি একটি করে ফুলের চারা লাগিয়েছে। সেখানে গোলাপ, হাস্নাহেনা ও গাঁধাফুল ফুটেছে। আরো কিছু গাছে ফুল ফুটবে বলে আমাকে পূর্বাভাস দিল হাসি। আমরা বাগানটার কাছে এলাম। বাগানটার কাছে কিছু খড় বিছিয়ে বসলাম পাশাপাশি। হাসি নীরব। আমিও নীরব। জোছনা বৃষ্টি অবলোকন করছি নীরবে। এমন সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করল হাসি। আমি প্রথমে কিছুই বুঝতে পারিনি। এমন সুন্দর হাস্যৌজ্জ্বল কথাবার্তার ভিতর হাসির গুমরে কাঁদা আমায় হতবাক করে দিল। আমাকে কাছে পেয়ে সে এভাবে কাঁদছে কেন? এসময় তো তার হাসার কথা, খেলার কথা, নাচার
কথা, গান গাওয়ার কথা। অথচ এসবকিছু ভুলে সে শুধু কাঁদছে! কাঁদছে তো কাঁদছেই।
সে কাঁদতে কাঁদতেই বলল, ভাইয়া আমি এখন কি করবো? কিছুই বুঝতে পারছি না। আব্বু বলেছে, এই বিয়ে করতে হবে। আম্মুও বলছে একই কথা। বিয়ের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। এর আগে কিছু একটা করতে হবে।
আমি তোর কষ্টটা বুঝিরে হাসি। বিয়েটাকে তুই কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিস না। পারবি কি করে, এই বয়সের এমন একটা গাবদা পুরুষকে বিয়ে করা পৃথিবীর কোনো মেয়ের পক্ষেই সম্ভব নয়। তোর পক্ষেও অসম্ভব! ওরা তোকে হাতপা বেঁধে, জমের ঘরে পাঠাতে চায়। আমি বিষয়টাকে কোনোভাবেই মানতে পারছি না।
ভাইয়া, আমি পড়াশোনা করব। পড়াশোনা করতে আমার খুব ভালো লাগে।
হ্যাঁ। তুই পড়াশোনাই করবি। সবাইকে বলবি, তুই বিয়ে করতে পারবি না। তোর এখনো বউ সাজার সময় হয়নি।
বাবা যে মেরে ফেলবে আমাকে!
কিছুই করতে পারবে না। আমি আছি না? একটু কষ্ট তো তোকে স্বীকার করতেই হবে।
আপনি যা বলবেন, আমি তা-ই শুনবো।
ঠিক আছে লক্ষ্মীটি। এখন চল ঘুমাবি।

হাসির চোখের জল মুছে দিয়ে তাকে ঘরে পৌঁছে দিলাম। আমি বাড়িতে না গিয়ে বাড়ির পাশের মেঠো রাস্তায় পায়চারি করছি। পৃথিবীর সবাই ঘুমিয়ে গেছে। শুধু আমি আর চাঁদ তারারা জেগে আছে। এতক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে হাসিও। আমি মেঠো রাস্তা আর বাড়ির উঠোনে পায়চারি করতে করতে ভাবছি, হাসিকে নিয়ে, ওর বিয়ের অদ্ভুত আয়োজন নিয়ে। গভীরভাবে ভাবছি, ওর মুক্তি নিয়ে। তাকে কিভাবে কসাইদের হাত থেকে রক্ষা করা যায়, কিভাবে সুন্দর একটি ফুলকে বাঁচানো যায়; এমন ভাবনায়ই কেটে গেল জোস্নালোকিত নির্ঘুম রাত। কিন্তু খুব সহজে হাসিকে বাঁচানোর কোনো উপায় খুঁজে পেলাম না। রয়ে গেলাম গোলক ধাঁধায়।

পরদিন কলেজে যাইনি। তেমন গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল না। তার উপর মনটা ভালো নেই। আমার শুধু একটাই চিন্তা— আমি একটি ফুলকে বাঁচাব। তাকে বাঁচাতে হবেই। তার অকালে ঝরে যাওয়ার আশংকা আমাকে ব্যাকুল করে তুলেছে। প্রতিদিন তার সরল সুন্দর হাসি দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি তার এমন সুন্দর ও নিষ্পাপ হাসি সারা জীবন অটুট রাখতে চাই।

সন্ধ্যায় পড়তে বসলাম। বইয়ের পাতা শুধু উল্টাচ্ছি আর উল্টাচ্ছি। পড়তে ইচ্ছে করছে না। ঐদিন বিকেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে, হাসির কান্না বারবার মনে পড়ছে আমার। তার ব্যথাভরা অশ্রুর বান আমি ভুলতে পারছি না কিছুতেই। তার ঝরে পড়ার আশংকায় এত ভয়! অথচ তার বাবা-মা তাকে ঝরাতে পারলেই যেন বাঁচে!
আমার ভাবতে অবাক লাগে! আমরা কত নিষ্ঠুর হয়ে গেছি। কোমলমতি মেয়েদের প্রতিই আমরা বেশি নিষ্ঠুর হই। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বেড়ে ওঠা নিয়ে আমরা তেমন ভাবি না। ভাবি শুধু ছেলেদের নিয়ে। তাদের মানুষ করাই আমাদের সবার লক্ষ্য ও স্বপ্ন। মেয়েদের প্রতি আমরা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করি। মেয়েদের চেয়ে এখানে ছেলেদের গুরুত্ব বেশি। মেয়েদের ভূমিকাই বা কম কোথায়? একটা ছেলেকে তো একটা মেয়েকে নিয়েই স্বপ্ন বুনতে হয়। পাড়ি দিতে হয় স্বপ্নমোড়ানো নিঃসীম জীবনপথ। তার প্রিয় সঙ্গিনী যদি স্বপ্নের মত যোগ্যতা সম্পন্ন না হয়, তাহলে কি সে জীবন কখনো সুখময় হতে পারে? একদম না।

একটা সন্তানকে গর্ভে ধারণ থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত প্রায় সব দায়িত্ব পড়ে মায়ের কাঁধে। অন্য কেউ ইচ্ছে করলেও তা পারবে না। আমাদের সবার ক্ষেত্রেই তা দিনের আলোর মত সত্য। মেয়েরা শিক্ষিত হলে, তাদের উপযুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ দেয়া হলে, সারা পৃথিবী তার সুফল পাবে। শিক্ষিত ও যোগ্যতা সম্পন্ন নারীর গর্ভ থেকে জন্ম নেবে সুস্থ সবল স্বাস্থ্যবান শিশু। একজন শিক্ষিত মা তার শিশুকে মনের মত করে জীবনের ছবি আঁকা শেখাবে। ধীরে ধীরে শিশুটি গড়ে উঠবে একজন সুশিক্ষিত ও সচেতন মানুষ হিসেবে। সে হয়ে উঠবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ। আলোকিত করবে সারা পৃথিবী।

পড়ার শব্দ শুনতে না পেয়ে, মা এলো আমার কক্ষে। আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, কিরে সজল, তোর কি আজ মন ভালো নেই?
সেরকম কিছু নয়, মা। এমনিতেই ভালো লাগছে না।
তুই কি শুনেছিস? হাসির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। গফুর ভাই কাজটা ভালো করছে না।
শুনেছি মা। হাসির মুখেই শুনেছি।
হাসির সাথে তোর দেখছি, খুব ভালো সম্পর্ক!
আমার চাচাত বোন। সম্পর্ক তো থাকতেই পারে।
এক কাজ করলে কেমন হয় সজল?
কি কাজ মা?
ঐ বিদেশী বরের সাথে হাসির বিয়ে না দিয়ে, তোর সাথে দিয়ে দিই?
না, মা! আমাদের কারোরই এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। তুমি জান মা। হাসি দারুণ মেধাবী। স্কুলের সেরা ছাত্রী। পড়ালেখার প্রতি ওর প্রবল আগ্রহ। আমার বিশ্বাস হাসি জীবনে অনেক বড় হবে।

তুই মনে হয় ওর সম্বন্ধে কিছু একটা ভাবতিস।
অন্য কিছু নয়। শুধু ভাবছি ওর বিয়ের কথা। এই বিয়েটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। তুমিই বল মা, হাসির জীবনটা শেষ হয়ে যাবে না? তুমি কিছু একটা কর, প্লিজ ডিয়ার মা।
আমার কথা তোর বাবাই শুনে না, তোর চাচা শুনবে কোন দুঃখে?
মা, তুমি তো একজন শিক্ষিত নারী। তোমার চোখের সামনে এইরকম একটা মেয়ে অকালে ঝরে গেলে, তুমি সহ্য করতে পারবে?
কি করব বল। এখন তো দেখছি তা-ই করতে হবে। তোর বাবা একজন শিক্ষক। শিক্ষক হয়ে কত বলেছে, তোর চাচা কোনো কথাই শুনছে না। আমার কথা শুনবে বলে কি তোর মনে হয়?
হ্যাঁ, মা। আমার বিশ্বাস তুমিই পারবে। তুমিও একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলে। এইচএসসিতে প্রথম বিভাগে পাশ করেছ। তারপর ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার আগেই তোমার বিয়ে হয়ে যায়। না হয় তুমিও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতে।
সজল, তোর কথা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি গর্বিত তোর মা হতে পেরেছি বলে। তোর মত একটি করে সজল যদি বাংলার ঘরে ঘরে থাকতো, তাহলে বাংলার নারীরা আজ এত অবহেলার মধ্যে থাকতো না। যৌতুক, এসিড সন্ত্রাস, বাল্য বিবাহ, অপহরণ, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন সমাজ থেকে চিরতরে বিদায় নিত। শিক্ষাদীক্ষায় নারীরা এগিয়ে যেত অনেক দূর।

চলবে…

উপন্যাসিক: মোঃ নূরুল আলম আবির
প্রকাশ: বইমেলা, ২০১০ইং(পর্ব—৪)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD