যার জীবন আছে,তার মৃত্যু আছে কিংবা জন্মিলে মরিতে হইবে এই বাক্য দুটির সাথে আমরা অতীব পরিচিত।মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব।তাই জীবনযাপনের তাগিদে,বেঁচে থাকা কিংবা ভালো থাকার লড়াইয়ে মানুষের জীবনও সংগ্রামময় হয়ে থাকে।সেই লড়াই বা সংগ্রামে যারা উত্তীর্ণ হতে পারে,তারা বীরের বেশে পরবর্তী মুহূর্ত উপভোগ করে।কেউ ব্যর্থ হলে তা অর্জনে পুনরায় সচেষ্ট হয়।আবার কেউবা জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে বেছে নেয় আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্খিত পথ।
মানুষের জীবনের সিংহভাগ মুহূর্ত কাটে সংগ্রাম করে।জন্মের পূর্বে ব্যক্তির বাবা ও মায়ের পবিত্র মিলনের মাধ্যমে কোটি কোটি শুক্রাণুর মধ্য থেকে যে শুক্রাণুটি মায়ের ডিম্বাণুতে আঘাত হানে,সেটি থেকেই মানুষের জন্ম হয়।গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সহজেই অনুমেয় মানুষ জন্ম থেকেই চ্যাম্পিয়ন বা চ্যাম্পিয়ন হয়েই মানুষের জন্ম।যান্ত্রিক এই জীবনে পরবর্তী সফলতা লাভের জন্য প্রয়োজন কেবল পরিশ্রম বা সংগ্রাম।
মানুষ মূলত হতাশা থেকে আত্মহত্যার মতো কাপুরুষোচিত পথ বেছে নেয়।জীবন যেখানে বিদ্যমান,সেখানে সমস্যার আশঙ্কা স্বাভাবিক এবং প্রতিটি সমস্যারই সমাধানের পথ রয়েছে।মানবজীবনে হতাশার বিভিন্ন রূপ রয়েছে।পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া, চাকুরি না পাওয়া,পছন্দের মানুষটিকে জীবনসঙ্গী হিসেবে না পাওয়া,ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে ঋণে জর্জরিত হওয়াসহ নানামূখী সমস্যায় মানুষ জর্জরিত হয়ে থাকে।গভীরভাবে ভাবলে প্রতিটি সমস্যারই সমাধান বের করা সম্ভব।
একটি সমস্যা সমাধানের হাজারো পথ তৈরি সম্ভব।কোনো কাজে একবার ব্যর্থ হলে তাতে সফল হতে বারবার প্রচেষ্টা চালানো হলো আদর্শ মানুষের কাজ।কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ভাগ্যের চাকা এমনভাবে ঘুরানো সম্ভব যা পরিশ্রম বিমুখ মানুষের কাছে অলৌকিক বলে মনে হবে।জীবনে হতাশা আসলে সবসময় মনে সাহস রেখে তা দৃঢ়চিত্তে মোকাবেলা করার মনোবল তৈরি করতে হবে।মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তখনই,যখন সে সমস্যার কথা কারো সাথে আলোচনা করে না।তখন মনে হয়,সমস্যা সমাধানের সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ১৩ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে বিগত এক বছরে বাংলাদেশে প্রায় ১৪ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।সারাবিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে।সভা-সেমিনার,র্যালির মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।এজন্য প্রয়োজন ব্যক্তিপর্যায়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি।ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে মানুষকে হতাশা নামক নীরব ঘাতকের ছোবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব।
আত্মহত্যার কঠোর শাস্তি সম্পর্কে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের মনে তা প্রোথিত করতে হবে।পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ১৩৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে,তোমরা হতাশ হয়ো না।দুঃখ করো না।যদি তোমরা মুমিন হও,তোমরাই বিজয়ী হবে।এই আয়াতের ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় মানুষের সকল সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় হলো আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা।কারণ মুমিন হবার প্রথম শর্ত ঈমান বা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা।
এই বিশ্বাস যদি মনে সবসময় জাগ্রত থাকে,তাহলে যেকোনো সমস্যা,বিপদ,বাঁধা সামনে আসলে আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে মোকাবেলা করার মনোবল মনে সৃষ্টি হবে।সকল সমস্যা সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন,তিনিই তা থেকে উদ্ধার করবেন বলে মনের মধ্যে একপ্রকার আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়।অন্যথায় মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে, হতাশ হয়ে জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলে।অর্থ্যাৎ সহজ কথায় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখলে মানুষের জীবনে কখনো হতাশা আসবে না।আর যদি কখনো হতাশা আসে,তাহলে বুঝতে হবে মনে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থার অভাব রয়েছে।
ইতিহাস থেকে সাফল্যপ্রাপ্তদের জীবনী অনুসন্ধান করলে দেখা যায়,সফলতা লাভের পূর্বে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছেন।বারবার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন,পরিশ্রমের মাত্রা বাড়িয়েছেন।অতঃপর সফল হয়েছেন।নেপোলিয়ান বোনাপার্টের যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস আমরা সকলেই জানি।মহাকবি ফেরদৌসি শাহনামা রচনা করেছেন ৩০ বছর ধরে।মাশরাফি বিন মোর্তুজা নিজেকে বারবার অপারেশন থিয়েটারে নিক্ষেপ করেছেন।কিন্তু তিনি কখনো ভেঙে পড়েননি।হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক।
মানুষ কখনো তার যোগ্যতার চেয়ে বেশি কঠিন কাজের মুখোমুখি হয় না।যার সামনে যে বিপদ আসে,তা মোকাবেলার যোগ্যতা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির রয়েছে।এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনের সূরা বাকারার ২৬৮ নং আয়াতে বলেছেন,আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না।
মানুষের যান্ত্রিক জীবনে পরতে পরতে রয়েছে সংগ্রাম।সাফল্য লাভের জন্য,নিজেকে সেরাদের সেরা প্রমাণের জন্য,নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য করতে হবে পরিশ্রম ও অধ্যবসায়।মুছে ফেলতে হবে গ্লানি ও হতাশা।জীবনে যা ঘটে গেছে,যা হয়ে গেছে তার জন্য অনুশোচনা না করে সেই ঘাটতি পূরণ করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজে নেমে সে অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমেই মানবজীবনের সফলতা নিহিত রয়েছে।
রাতের পরেই আসে শুভ্র সকাল।সোনালী সূর্য।আলোকিত ঝলমলে দিন।শীতের পরেই আসে বসন্তের সিগ্ধতা।বিপদের পরেই আসে সফলতা।হতাশা মুছে ফেলে পরিশ্রমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে সামনে দিকে পথ চলায় হলো সফলতম ব্যক্তির প্রধান বৈশিষ্ঠ্য।সবসময় মনে রাখতে হবে,আগামী দিন কেবল সম্ভাবনার।
লেখক : শিক্ষার্থী,লোক প্রশাসন বিভাগ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া।